সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: রং, তুলি ব্যবহার করে যে ত্রিমাত্রিক ছবিও আঁকা যায়, সে সম্পর্কে ধারণা ছিল না কোনও। এবার সবটা চোখের সামনে একেবারে স্পষ্ট। প্রায় সবক’টি ইন্দ্রিয় দিয়েই যে স্পর্শ করা যাচ্ছে ছবি! ঝাড়গ্রামের প্রত্যন্ত প্রান্তে আধুনিক সভ্যতা থেকে কয়েক যোজন দূরে থাকা শবর ছেলেমেয়েদের নিয়ে এভাবে থ্রি ডি পেন্টিংয়ে যিনি মেতে উঠলেন, তিনি কিন্তু সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ের এক বাসিন্দা। মার্কিন নাগরিক ট্রেসি লি স্ট্রাম।
ঝাড়গ্রামের লালবাজার গ্রাম মূলত শবর অধ্যুষিত। তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতি ওই গ্রামটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শবরদের জীবনে উন্নয়নের আলো ফেলার পাশাপাশি তাঁদের এই শিল্প-সংস্কৃতিকেও গণ্ডির বাইরে বের করে আনতে একাধিক কর্মসূচি নিয়েছে চালচিত্র অ্যাকাডেমি। বিভিন্ন শিল্পমাধ্যমের তাঁদের উৎসাহ এবং দক্ষতাকে তুলে ধরাই মূল উদ্দেশ্য। কলকাতা এবং বাইরের প্রথিতযশা শিল্পীদের ঝাড়গ্রামে এনে শবর ছেলেমেয়েদের ওয়ার্কশপ করানো হয় অ্যাকাডেমির তরফে। সেভাবেই এখানে আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে এসেছিলেন আমেরিকার ট্রেসি লি স্টাম ও তাঁর স্বামী সায়ক মিত্র।
[আরও পড়ুন: দাম্পত্যের ২৫ বছর অন্যভাবে সেলিব্রেট, শাহিনবাগে কৌশিক-রেশমি]
ট্রেসি নিজে একজন বিখ্যাত থ্রি ডি পেন্টার। ত্রিমাত্রিক ছবি ফুটিয়ে তুলে দেন বাস্তবের অনুভূতি। শবর গাঁয়ে এসে ট্রেসি একেবারে মুগ্ধ। কারণ, ততদিনে নিজেদের মাটির ঘরের দেওয়াল, গাছের গায়ে এঁকে ফেলেছে অনেক কিছু। স্বতস্ফূর্ত শিল্পভাবনা থেকে।
ট্রেসি তখন ঠিক করলেন, এঁদের অন্য কিছু শেখানো যাক। তিনি নিজে একজন থ্রি ডি পেন্টার। দ্বিমাত্রিক সমতলে এঁকে তাকে ত্রিমাত্রিক ‘এফেক্ট’ দেওয়াই তাঁর মূল দক্ষতা। আর লালবাজার গ্রামের মাটিতে বিরাট একটি ক্যানভাস পেতে সেই কাজই করলেন ট্রেসি। ছোট থেকে বড়, সবাইকে তাতে শামিল করেন। বেশ কয়েকদিন এই কাজের পর যা তৈরি হল, তা দেখে তাজ্জব গ্রামবাসীরা। থ্রি ডি শিল্পের জাদুতে তৈরি হল একটি কুয়ো, তার জলে ঘুরে বেড়ানো মাছের দল। আর কুয়োর চারপাশে ঘিরে বসে সেই ছবির মাছ স্পর্শ করে রীতিমত উচ্ছ্বসিত ছোটরা। সুন্দর গ্রাম যেন সুন্দর হয়ে উঠল আরও।
এই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন ট্রেসি। তিনি লিখেছেন, ছোটদের আনন্দ দেওয়ার জন্যই থ্রি ডি পেন্টিং করে এমন একটা বিষয় তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যা পুরোপুরি সফল হয়েছে।
[আরও পড়ুন: এবার কলকাতা বইমেলাতেও CAA’র প্রতিবাদ, সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে স্টল সাজাল ‘সৃষ্টিসুখ’]
কীভাবে ত্রিমাত্রিক ছবি আঁকতে হয়, তার প্রাথমিক শিক্ষাও তিনি দিয়েছেন শবর সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের। চিত্রশিল্পে তাঁদের যা দক্ষতা, তাতে তাঁরা নিজেরাও এমন সৃষ্টিকাজ তুলে ধরতেই পারেন, মনে করেন মার্কিন নিবাসী শিল্পী। আবারও তিনি ঝাড়গ্রামে এসে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। এভাবেই রং, তুলি আমেরিকা-ঝাড়গ্রামকে গেঁথে ফেলেছে এক সুতোয়।
ছবি: প্রতীম মৈত্র।
The post মার্কিন শিল্পীর তুলিতে সেজে উঠছে শবর গ্রাম, দেওয়াল-দালানে ত্রিমাত্রিক ছবি appeared first on Sangbad Pratidin.