সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাকিস্তানে ফের নিশানায় চিনা নাগরিকরা। আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫ জন চিনা ইঞ্জিনিয়ার। মঙ্গলবার এক ফিদায়েঁ জঙ্গি বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে ধাক্কা মারে ওই ইঞ্জিনিয়ারদের কনভয়তে। কিন্তু এটাই প্রথমবার নয়। এর আগেও পাকভূমে জঙ্গিদের টার্গেট হয়েছেন চিনারা। ফলে এই ঘটনায় ফের একবার প্রশ্ন উঠছে সেদেশে কর্মরত চিনাদের নিরাপত্তা নিয়ে।
এদিনের ঘটনাটি ঘটে পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে। ৫ জন চিনা ইঞ্জিনিয়ার গাড়িতে চেপে ইসলামাবাদ থেকে খাইবার পাখতুনখোয়ার দাসুতে যাচ্ছিলেন। সেখানে চিনের সহযোগিতায় একটি বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। সেই কাজের তদারকি করতেই দাসুতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। পথেই তাঁদের গাড়িতে এসে ধাক্কা মারে বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়ি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৫ চিনা নাগরিক ও ওই গাড়ির চালকের। তবে কনভয়ের অন্য গাড়িগুলো সুরক্ষিত রয়েছে বলেই খবর। কিন্তু কেন বারবার আক্রান্ত হচ্ছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দেশের মানুষ? এর মূলে কি চিনের বিতর্কিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প?
[আরও পড়ুন: জার্মানির পর এবার আমেরিকা, কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি নিয়ে মুখ খুলল ওয়াশিংটন]
২০১৫-তে স্বাক্ষর হওয়া মউয়ের ভিত্তিতে চিন-পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি নির্মাণকার্য শুরু হয়েছে। চিনের প্রস্তাবিত ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতির উপর ভিত্তি করে, তাদের অর্থ সাহায্যেই এই করিডর তৈরি হচ্ছে। পাকিস্তানের গদর পোর্ট থেকে চিনের শিনজিয়াং প্রদেশ পর্যন্ত মোট ৩,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথটি তৈরি করা হয়েছে৷ এই করিডর নিয়ে প্রথম থেকেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছেন বালোচিস্তান-সহ গিলগিট-বালতিস্তান ও পিওকে-র নাগরিকরা৷ অভিযোগ, পেশিশক্তির জোরে তাঁদের বাসভূমি কেড়ে নিয়ে এই করিডর তৈরি করেছে পাকিস্তান৷ যাতে পূর্ণ মদত দিয়েছে চিন৷ এই অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই স্বাধীনতার দাবিতে পাক প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে বিদ্রোহী সংগঠন ‘বালোচ লিবারেশন আর্মি’। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই করিডর তৈরি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন বালোচরা। পাকিস্তানের জঙ্গিদের রোষ গিয়ে পড়ছে পাকিস্তানে কর্মরত চিনাদের উপর।
বলে রাখা ভালো, ২০২২ সালেও করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ৩ চিনা শিক্ষকের। এর পর গত বছরের ১৩ আগস্ট বালোচিস্তানের গদর ফকর ব্রিজের উপর চিনা ইঞ্জিনিয়ারদের কনভয়ে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। ব্রিজের উপর বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জেহাদিরা। তার পর কনভয়ের নিরাপত্তারক্ষী সঙ্গে গুলির লড়াই চলে তাদের। নিহত হয় দুই জঙ্গি। ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল বালোচ বিদ্রোহী সংগঠন। আক্রান্ত চিনা ইঞ্জিনিয়াররা চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। যা নিয়ে পাকিস্তানের উপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল বেজিং। গত বছরই তাদের দেশে কর্মরত চিনাদের বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থার করেছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু ফের একবার আক্রান্ত হলেন চিনা নাগরিকরা। এদিনের ঘটনার পর জিনপিং প্রশাসন ইসলামাবাদকে কী বার্তা পাঠায় সেদিকেই নজর রয়েছে সকলের।