ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: একটা চিঠিই যথেষ্ট ছিল। আবেদন মেনে সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু হয়ে গেল। বৃহস্পতিবারই সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমে ডাউন সিনড্রোমে (downsyndrome) আক্রান্ত ৫০ জনকে জরুরি ভিত্তিতে দেওয়া হল করোনা টিকা (Corona vaccine)। আসলে এই বিরল রোগে আক্রান্তদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এঁদের বুদ্ধাঙ্ক কম হওয়ায় নিজেরাও নিজেদের ঠিকমতো যত্ন নিতে পারে না। ফলে যে কোনও রোগই আচমকা তাঁদের শরীরে বেশি করে থাবা বসায়। সেই কারণে এই রোগাক্রান্তদের ‘মোস্ট ভারনারেবল গ্রুপ’ হিসেবে চিহ্নিত করে জরুরি ভিত্তিতে টিকাদানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই এই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকারের। এদিন ভ্যাকসিন পেয়ে খুশি ডাউন সিনড্রোমের রোগীরা।
হাজারও প্রতিকূলতা নিয়ে এ ধরনের বিরল রোগের শিকার হয়ে জীবন কাটানো মানুষজনকে মহামারীর হাত থেকে রক্ষা করার এই উদ্যোগের একেবারে পুরোভাগে রয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুজয় ঘোষ। ট্রাইসোমি ২১ নামে একটি সংগঠন, যারা এঁদের নিয়ে কাজ করেন, তাদের হাতে হাত মিলিয়ে সুজয়বাবুই প্রথম চিঠি লিখেছিলেন রাজ্য সরকারের উদ্দেশে। বার্তা একটাই – ওঁদের টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। এই ‘ওঁরা’ কারা, তাও বিশদে জানিয়েছিলেন সুজয়বাবু। তাঁর কথায়, ”ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের গড় আয়ু কম। স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অন্তত ১০ গুন কম। যে কোনও রোগে তাই যে কোনও সময়ে এঁরা আক্রান্ত হতে পারেন। এঁদের করোনাবিধি মেনে চলার প্রবণতাও কম।” যেহেতু সব নাগরিককে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্রত নিয়ে এগোচ্ছে সরকার, তাতে এঁদেরও যাতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়া যায়, সেই আবেদন জানিয়েছিলেন সুজয়বাবু।
[আরও পড়ুন: কোভিড মোকাবিলা নিয়ে যোগীর প্রশংসায় মোদি, প্রধানমন্ত্রীকে পালটা কটাক্ষ মমতার]
তাঁর এই আবেদনে সাড়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তড়িঘড়ি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের টিকাদানের নির্দেশ দেন। সেইমতো এদিন এসএসকেএমে (SSKM)ভ্যাকসিন নিলেন এই গোষ্ঠীর ৫০ জন। এবার থেকে সপ্তাহে ২ দিন করে এঁদের টিকাকরণের জন্য শিবির হবে বলে জানানো হয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তরের তরফে। কো-উইন অ্যাপে যেভাবে নাম রেজিস্ট্রি করে ভ্যাকসিনের স্লট বুক করতে হয়, সেভাবেই এঁদেরও নাম নথিভুক্ত করা হচ্ছে। গোটা কাজটাই করে দিচ্ছেন সুজয়বাবু নিজে। এভাবেই তিনি এই বিরল রোগাক্রান্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন পরম বন্ধু হয়ে।