নব্যেন্দু হাজরা: বাংলায় ভোট। অথচ ব্যালটে বাংলা ভাষারই স্থান নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা চার সংগঠনের নাম লেখা হিন্দি এবং ইংরেজিতে। আর তা নিয়েই বিতর্ক। যে রাজ্যে নির্বাচন, সেখানকার ভাষা কেন ব্যালটে স্থান পেল না, সে প্রশ্ন তুলছেন মেট্রোরেলের কর্মীদের একাংশ।
বুধ এবং বৃহস্পতিবার মেট্রোরেলের নির্বাচন। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ভোট গ্রহণ। বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল এবং আরএসএস প্রভাবিত সংগঠন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। গোলাপ ফুল চিহ্ন বামেদের। তৃণমূলের চিহ্ন রেলইঞ্জিন। বই চিহ্ন কংগ্রেসের। আর ভারতীয় মজদুর সংঘের শ্রমিক সংগঠনের প্রতীক মুষ্টিবদ্ধ হাতে ধানের শিষ। নামে এই নির্বাচন অরাজনৈতিক হলেও পিছনে রয়েই গিয়েছে, ডান, বাম, বিজেপি। আর এই নির্বাচন ঘিরে এখন সরগরম মেট্রোভবন। ব্যালট দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সব সংগঠনই। ২০১৩ সালের পর ফের ভোটে প্রতিদ্বন্দিতা করবে সব দলের শ্রমিক সংগঠন। গত নির্বাচনে বাম প্রভাবিত মেট্রো রেলওয়ে মেনস ইউনিয়ন জয়ী হয়েছিল। তার পর থেকে এই ১১ বছর মেট্রোর স্বীকৃত সংগঠন হিসাবে তারাই রয়ে গিয়েছে। মেট্রো রেলওয়ে কর্মচারী সংঘ, মেট্রো রেলওয়ে মেনস ইউনিয়ন, মেট্রো রেলওয়ে ওয়ার্কার্স কংগ্রেস আর প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে লড়াই। মেট্রোর কারশেড থেকে মেট্রো কর্মীদের আবাসন, সর্বত্রই গত কয়েকদিন ধরে জোরকদমে চলেছে প্রচার।
মোট ৩৩২৭ জন ভোট দেবেন আজ ও আগামিকাল। তবে ব্যালটে বাংলা ভাষার অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়া নিয়ে সরব হয়েছে সব সংগঠনই। মেট্রো রেলওয়ে প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সহ সভাপতি শুভাশিষ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কেন্দ্রের নিয়ম আছে, তিন ভাষাতেই রাখতে হবে ব্যালটে। হিন্দি, ইংরেজি এবং রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষা। কিন্তু এখানকার কর্তৃপক্ষের অবাঙালীপ্রীতি একটু বেশিই। তারই ফলশ্রুতি এটা।’’ মেট্রো রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুজিত ঘোষ বলেন, ‘‘এটা আমাদের নজরে এসেছে। কিন্তু এখন কিছু করার নেই। বাঙলায় অবশ্যই সংগঠনের নাম ব্যালটে লেখা থাকা উচিৎ ছিল। আগামীবারের নির্বাচন থেকে যাতে হয়, তা দেখা হবে।’’
সম্প্রতি ভাষাকে কেন্দ্র করে দুই মহিলা যাত্রীর মধ্যে মেট্রোয় কথা কাটাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। যা নিয়ে নেটমাধ্যমে আলোড়িত হয়েছে। সেখানে এক মহিলাকে অন্য যাত্রীর প্রতি খোঁচার সুরে বলতে শোনা যায়, ‘ভারতে থেকে আপনি বাংলা বলতে পারেন, হিন্দি বলতে পারেন না?’ তার উত্তরে বাংলাভাষী মহিলা যাত্রীও পালটা জবাব দেন। একটা সময়, ওই অবাঙালি মহিলাকে বলতে শোনা যায়, ‘এটা বাংলাদেশ নয়, এটা ভারত।’ আর এই নিয়ে তোলপাড় হয় নেটমাধ্যম। প্রতিবাদও করে একাধিক সংগঠন। আর এবার খোদ মেট্রোর নির্বাচনেই ব্রাত্য রইল বাংলা ভাষা।