দেব গোস্বামী, বোলপুর: ৫১ সতীপীঠের সতীপীঠ কঙ্কালীতলা। বিশ্বাস, এখানেই থেকে গিয়েছিল সতীর কোমর তথা কাঁকাল। এখানকার দেবী পরিচিত বেদগর্ভা হিসেবে। আর এখানেই প্রথা ও রীতি মেনেই আয়োজিত ৫১ কুমারী পুজো। তবে কালীপুজোর সময় নয়, শতাব্দীপ্রাচীন ‘পঞ্চবটী’তে দুর্গাপুজোর পর ত্রয়োদশীতে আয়োজিত হয় এই পুজো। এই দিনটিতে বীরভূমের পবিত্র স্থানে বিপুল জনসমাগম হয়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। মহা সমারোহে আয়োজিত হয়েছিল কুমারী পুজো।
৪৯ বছর ধরে ৫১ কুমারীকে দেবী রূপে পুজোর চল রয়েছে। জানা যায়, পারিবারিক সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নতি কামনায় কঙ্কালীতলায় তাঁদের প্রতিষ্ঠিত ‘পঞ্চবটী’তে ৫১ কুমারীর পুজোর প্রচলন করেছিল বোলপুর লাগোয়া কাপাসটিকুরীর চট্টোপাধ্যায় পরিবার। প্রতি বছরই ত্রয়োদশী তিথিতে সতীর দেহের ৫১টি খণ্ড সংকল্প করে একটি ঘটে স্থাপন করা হয়। এর পর কঙ্কালীতলা কালী মন্দির সংলগ্ন পঞ্চবটী গাছের নীচে ৫১ জন কুমারীর পুজো শুরু হয়। এদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম হয়।
বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায় মা কঙ্কালীর স্বপ্নাদেশ পান। স্বপ্নাদেশ পেয়েই ত্রয়োদশীর দিন ১৯৭৫ সালে এই পুজো শুরু করেন। তার পর থেকে চলে আসছে এই ৫১ কুমারীর পুজো। জমিদারি না থাকলেও চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পূর্বসূরিদের প্রথানুযায়ী এখনও খরচের প্রায় সিংহভাগ তাঁদেরই বহন করেতে হয়। বাকি অর্থ নানা ভাবে সংগৃহীত হয়। বিভিন্ন গ্রামের ৫ থেকে ১১ বছর বয়সের কুমারীদের পরিবারের সদস্যরা পুজোর জন্য নাম লিখিয়ে যান। এর পরই এদের মধ্যে ৫১ জনকে বেছে নেওয়া হয়। কুমারীদের লাল পাড় শাড়ি পরানো হয় এবং ফুল দিয়ে সাজানো হয় দেবীর মতো। পুজোর উদ্যোক্তা কাঞ্চিশ্বর চট্টোপাধ্যায় জানান, "৫১ কুমারী পুজোর আয়োজন করেন মন্দিরের পুরোহিত লাল বাবা ওরফে বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায়। তার পর থেকে প্রতি বছর রীতি মেনে এই কঙ্কালীতলায় ত্রয়োদশীর দিন ৫১ কুমারী পুজো করা হয়ে থাকে। প্রতিমা রূপেই সাজিয়ে তোলা হয় এবং হোমযজ্ঞের মধ্য দিয়ে পূজিতা হয় কন্যারা।"