সুকুমার সরকার, ঢাকা: আজ ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলেও গত অক্টোবর থেকেই আমেরিকায় শুরু হয়েছে আগাম ভোটপর্ব। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি প্রদেশে 'আর্লি ভোট' হয়ে গিয়েছে। আজ ভোটগ্রহণের চূড়ান্ত দিন। আর এই নির্বাচনে লড়ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছজন। ডেমোক্র্যাট নেত্রী কমলা হ্যারিস নাকি রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প? পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাকে চাইছে বাংলাদেশ?
জানা গিয়েছে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যাঁরা এই ভোটে লড়াই করছেন তাঁরা সকলেই নির্বাচিত আইন প্রণেতা। বিভিন্ন স্টেটে ফের সকলে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। তবে এবার নতুন কোনও প্রার্থীর খবর পাওয়া যায়নি। টানা চতুর্থ মেয়াদে সেনেটর হওয়ার দৌঁড়ে রয়েছেন কিশোরগঞ্জের শেখ এম রহমান। জর্জিয়ার ডিস্ট্রিক্ট-৫ থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এই একই স্টেটের ডিস্ট্রিক্ট-৭ থেকে পুনরায় লড়ছেন নোয়াখালীর নাবিলা ইসলাম। কানেক্টিকাট ডিস্ট্রিক্ট-৪ থেকে সিনেটর হওয়ার লড়াইয়ে আছেন চাঁদপুরের মাসুদুর রহমান। ভার্জিনিয়ায় সিনেট ডিস্ট্রিক্ট-৩৭ থেকে ভোটযুদ্ধে শামিল নোয়াখালীর সাদ্দাম সেলিম। এঁরা প্রত্যেকেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী।
এদিকে, নিউ হ্যাম্পশায়ার স্টেটের রকিংহ্যাম ডিস্ট্রিক্ট-২০ থেকে লড়ছেন পিরোজপুর জেলার আবুল বি খান। তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী। ষষ্ঠবার হাউস মেম্বার হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন তিনি। এছাড়া পেনসিলভ্যানিয়া, মিশিগান, নিউ জার্সি-সহ অন্যান্য স্টেটে কয়েকজন বাংলাদেশি-আমেরিকান রয়েছেন। নিউ জার্সি প্লেইন্স বরো টাউনশিপ থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলম্যান ড. নুরুন নবী টানা ১৪ বছর ধরে এই পদে রয়েছেন। এবারও নিজের জয় নিয়ে আশাবাদী এই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। এতো গেল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের কথা। কিন্তু বাংলাদেশের পছন্দ কাকে?
মাস চারেক আগেই বড় রাজনৈতিক পালাবদল ঘটেছে বাংলাদেশে। গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর গদি হারিয়েছেন শেখ হারিয়েছেন। তার পর থেকে গোটা দেশে নিপীড়নের শিকার হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা। যা নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আমেরিকা। কয়েকদিন আগে নির্বাচনী প্রচারের ফাঁকে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে। 'বাংলাদেশের চরম বিশৃঙ্খল' বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য হিন্দু আমেরিকানদের ভোট পাওয়ার কৌশল। এখন প্রশ্ন ট্রাম্প যদি ফের প্রেসিডেন্ট পদে ফিরে আসেন তাহলে ঢাকার সঙ্গে তাঁর কূটনৈতিক নীতি কী হবে?
এই প্রশ্নই করা হয়েছিল গবেষণাপ্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যানের কাছে। তিনি বলেন, "প্রথমত, বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য নির্বাচনী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই দেখা উচিত। ট্রাম্প যে মন্তব্য করেছেন তা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভালোভাবে নেবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে এমন একজন ব্যক্তি আছেন যিনি অতীতে ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন। বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারতের দৃষ্টিতে দেখে না। শেখ হাসিনার সরকারের শেষ কয়েক বছর আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন ছিল। গণতান্ত্রিক সম্মেলনে আমন্ত্রণ না জানানো, র্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা চালুর পর সেই টানাপড়েন আরও তীব্র হয়। গত ৫ আগস্ট হাসিনার সরকারের পতনের পর আমেরিকা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় নেওয়া বৈশ্বিক নীতিগুলোর প্রভাব বাংলাদেশের উপরও পড়েছে।"
আর ডেমোক্র্যাট প্রার্থী তথা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট যদি জয়ী হন তাহলে কি বাংলাদেশের ব্যাপারে বর্তমান মার্কিন নীতিই অব্যাহত থাকবে? এই প্রশ্নের উত্তর কুগেলম্যান বলেন, "আমার মনে হয়, কমলা হ্যারিস আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হলে বাংলাদেশের ব্যাপারে বর্তমান মার্কিন নীতি অনেকাংশেই অব্যাহত থাকবে। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি নীতি প্রণয়নে তাঁর যে বড় ভূমিকা ছিল—এমনটা আমি মনে করি না। তবে তাঁর বিদেশনীতি বাইডেন প্রশাসনের বিদেশনীতির আদলে চলতে পারে।" ফলে বাংলাদেশের এই হাইভোল্টেজ লড়াইয়ে নজর রয়েছে ঢাকারও।