shono
Advertisement

৬৩ দিনের শিশুর কাছে হেরে ভূত ভাইরাস, ভেন্টিলেশন থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ কাঁথির খুদে

এই শিশুই দেশের কনিষ্ঠতম করোনাজয়ী, দাবি চিকিৎসকদের। The post ৬৩ দিনের শিশুর কাছে হেরে ভূত ভাইরাস, ভেন্টিলেশন থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ কাঁথির খুদে appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 10:27 AM Aug 21, 2020Updated: 12:28 PM Aug 21, 2020

অভিরূপ দাস: ফুসফুসে যেদিন নোভেল করোনা ভাইরাসের (Coronavirus) হদিশ মিলেছিল, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ৪০ দিন। আর মেঘলা বৃহস্পতিবার হাসপাতাল থেকে ছুটি হওয়ার সময়ে ক্যালেন্ডারে যোগ হয়েছে আরও ২৩টা দিন। ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের (ICH) একরত্তি দেশের সর্বকনিষ্ঠ করোনাজয়ী। শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের দাবি, এত ছোট বয়সে করোনার ছোবল খেয়ে টানা ৮ দিনের ভেন্টিলেশন। সেখান থেকে সেরে ওঠা – গোটা দেশেই প্রথম।

Advertisement

গত ২০ জুলাই থেকে জ্বরে ভুগছিল শিশুটির। বাড়ির লোকেরা লক্ষ্য করেন, হাঁপড়ের মতো ওঠানামা করছে বুক। শ্বাসকষ্টের জেরে নাগাড়ে কেঁদে চলেছে একরত্তি। বাবা-মা গোড়ায় ভেবেছিলেন, সাধারণ জ্বর। এক সপ্তাহ পরেও না কমায় ২৮ জুলাই কোলের শিশুকে নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বাড়ি থেকে সটান পার্ক সার্কাসের শিশু হাসপাতালে হাজির হন মা-বাবা। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. খেয়া ঘোষ উত্তমের অধীনে চিকিৎসা শুরু হয়। প্রাথমিক এক্স-রে রিপোর্ট দেখে বোঝা যায়, নিউমোনিয়া জাঁকিয়ে বসেছে বুকে। সেখান থেকেই জ্বর। অক্সিজেন স্যাচুরেশন নেমে গিয়েছিল আশিতে। ২৯ জুলাই কোভিড টেস্ট করানো হয় শিশুটির। রিপোর্ট আসতেই দেখা যায়, সন্দেহই সত্যি। যে শিশুর মা ও বাবার কোল ছাড়া কোথাও যায়নি তাকেও কীভাবে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করল, তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিস্মিত হয়ে পড়েন চিকিৎসকরা।

[আরও পড়ুন: সাতদিনের করোনা যুদ্ধে অবশেষে হার, প্রয়াত কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার]

নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে শুরু হয় যুদ্ধ। ডা. খেয়া ঘোষ উত্তম এবং ডা. প্রভাস প্রসূন গিরির ‘নিকু’ টিম যৌথভাবে কাজ শুরু করে। বাচ্চাটিকে ভেন্টিলেশনে ঢুকিয়েও স্বস্তি পাচ্ছিলেন না চিকিৎসকরা। বাড়ছিল না অক্সিজেন স্যাচুরেশন। উপুড় করে শুইয়ে দেওয়া হয় খুদেকে। এই ‘প্রন পজিশনে’ বাচ্চাটির ফুসফুসের চাপ কিছুটা হলেও কমে। শরীরে তুলনামূলক বেশি পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ হতে থাকে। কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর কোনওরকম ঝুঁকি নিতে চায়নি ICH। এই শিশু হাসপাতালে সাধারণত করোনার চিকিৎসা হয়না। স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে কথা বলে শিশুটিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আইসিইউ অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া তা সম্ভব ছিল না। স্থানান্তরিত করার ঝুঁকিও ছিল মারাত্মক। শিশুটির মা দেবশ্রী মাইতি তা নিতে চাননি।

তিনি চিকিৎসকদের বলেন, “এখানেই চিকিৎসা করুন। দয়া করে আমার বাচ্চাকে বাঁচিয়ে দিন।” ডা. খেয়া ঘোষ উত্তমের কথায়, “এত ছোট বাচ্চাকে সবরকম ওষুধ দেওয়া যায় না। শরীরে প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সংক্রমণ এতটাই মারাত্মক ছিল আমরা ঝুঁকি নিইনি। এজিথ্রোমাইসিন ড্রাগ, স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন ‘পুশ’ করা হয় শিশুটির দেহে।”

[আরও পড়ুন: অভিযোগ নেয়নি পুলিশ, সাংসদ দেবের চেষ্টায় বাড়ি ফিরলেন ঘরছাড়া যুবক ও তাঁর মা]

প্রশ্ন ঘুরছিল একটাই। মা-বাবা কোভিড নেগেটিভ। তাহলে এত ছোট শিশু কিভাবে করোনায় আক্রান্ত হল? প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকদের সন্দেহ, কাঁথির যে নার্সিংহোমে শিশুটির জন্ম হয়েছে, সেখান থেকেই খুদের শরীরে ভাইরাস ঢুকেছে। কোনও কারণে তা প্রভাব ফেলতে একটু বেশি দেরি করেছে। ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরির কথায়, “এমনটাও হতে পারে শিশুটির মা-বাবা উপসর্গহীন ছিল। নির্দিষ্ট সময়ের পর তাদের শরীর থেকে ভাইরাস বিদায় নিয়েছে। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় ভাইরাস বাচ্চাটির শরীরে ডালপালা মেলেছে।”

নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট থেকে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয় শিশুটিকে। সেখানেই টানা আটদিন আইসিইউতে ছিল শিশুটি। অবশেষে গত ১৯ আগস্ট বাচ্চাটির কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। ২৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার পর হেলায় হার মানিয়ে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ সে।

The post ৬৩ দিনের শিশুর কাছে হেরে ভূত ভাইরাস, ভেন্টিলেশন থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ কাঁথির খুদে appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement