স্টাফ রিপোর্টার: দেরি করে অধিবেশন কক্ষে ঢুকেছিলেন। এই অপরাধে রাজ্যের পাঁচ মন্ত্রীকে ভোট দিতে দিলেন না অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। একই অপরাধে ভোট দিতে পারলেন না আরও দুই মন্ত্রী ও শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের দুই বিধায়ক। বুধবার বিধানসভায়।
দেশের দণ্ডবিধি সংক্রান্ত তিনটি নতুন বিল সংসদে আনতে চলেছে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) সরকার। ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’, ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ ও ‘ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম’ নামে এই তিনটি বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হলে দেশের বর্তমান দণ্ডবিধির খোলনলচে বদলে যাবে। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তাড়াহুড়ো করার বদলে আরও আলোচনার দাবিতে তৃণমূল বিধানসভায় প্রস্তাব এনেছিল। টানা দু’দিন আলোচনা শেষে বুধবার এই প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি চায় বিজেপি। সেই দাবি মেনে নেন অধ্যক্ষ। শুরু হয় ভোটের প্রস্তুতি।
[আরও পড়ুন: চার রাজ্যের বিধানসভার ফল লোকসভায় হলে লাভ কংগ্রেসেরই! কীভাবে?]
এদিকে এদিন সংহতি দিবসের কর্মসূচিতে শহিদ মিনারে ছিলেন অরূপ বিশ্বাস, ব্রাত্য বসু, পার্থ ভৌমিক-সহ রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী ও তৃণমূল বিধায়ক। সেখানে পাহাড় থেকে অরূপ বিশ্বাসের মোবাইলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ভাষণ দেন। সভার পর বিধানসভায় একসঙ্গে ঢোকেন অরূপ, ব্রাত্য, পর্যটন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু ও খাদ্য মন্ত্রী রথীন ঘোষ। ততক্ষণে বিধায়কদের জন্য ভোটদানে হাজির থাকার ‘অ্যালার্ম বেল’ বাজানোর পালা শেষ। অধ্যক্ষ অধিবেশন কক্ষের দরজা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। শুরু হয়েছে ভোটের স্লিপ বিতরণ। কিন্তু অ্যালার্ম বাজার পর বিধানসভায় পৌছনোয় সে সব কিছুই জানা ছিল না পাঁচ মন্ত্রীর। ফলে অভ্যাস মতো তঁারা সরাসরি দরজা ঠেলে ঢুকে পড়েন কক্ষে। সঙ্গে ঢোকেন উলুবেড়িয়া উত্তরের বিধায়ক নির্মল মাঝি। তাঁদের অধিবেশন কক্ষে ঢুকতে দেখেই প্রতিবাদ জানান বিজেপি বিধায়করা। তাঁরা স্পিকারকে বলেন, স্লিপ বণ্টনের সময় ভিতরে ঢোকা মন্ত্রী-বিধায়করা ভোটে অংশ নিলে তাঁরা ওয়াক আউট করবেন। স্পিকার জানিয়ে দেন, পরে ঢোকা কেউই ভোট দিতে পারবেন না। এই সময় বিধানসভা কক্ষে প্রবেশ করতে যান সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেন ও জোড়াসাঁকোর বিধায়ক বিবেক গুপ্ত। স্পিকারের ঘোষণা শুনে তিনজনই কক্ষের বাইরেই দাঁড়িয়ে যান।
[আরও পড়ুন: দিন-রাতের তফাত জানেন না রাহুল গান্ধী, বলে গিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়]
তারপরও অবশ্য হল্লা থামে নি! স্লোগান দিয়ে ওয়াক আউট করেন বিজেপির বেশির ভাগ বিধায়ক। দেখা যায়, সে সময় নিজের আসন থেকে ফিরে জন্য বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গাকে টানা অনুরোধ করে চলেছেন অধ্যক্ষ বিমানবাবু। তিনি বলেন, পরে আসা কাউকে ভোট দিতে দেবেন না তিনি। স্পিকারের সে ঘোষণা শুনে অশোক লাহিড়ী, মনোজ টিগ্গা-সহ কয়েকজন ফিরলে স্পিকার ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন। তিনি জানান, ১০১-৪২ ভোটে প্রস্তাবটি পাশ হয়েছে। স্পিকারের ডাকে কক্ষে মনোজ টিগ্গা, অশোক লাহিড়ীরা থেকে গেলও ওয়াক আউটে অটল থাকেন শঙ্কর ঘোষ, অগ্নিমিত্রা পাল-সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়ক। বিধানসভার বাইরে বেড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। বিরোধী দলের এহেন দ্বিমুখী অবস্থান নিয়ে প্রশ্নও ওঠে।