সুকুমার সরকার, ঢাকা: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট হয়ে দেশে ফিরলেন বহু ভারতীয় শিক্ষার্থী। ভারতে ফেরায় অপেক্ষায় আরও অনেকে ভিড় জমিয়েছেন সীমান্তে। জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৭০ জন পড়ুয়া ভারতে ফিরেছেন। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ। বন্ধ মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশের সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অসমর্থিত সূত্রে খবর, সংঘর্ষের জেরে বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা ৪০ পেরিয়ে গিয়েছে।
এদিকে, দেশে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর থেকে আজ শুক্রবার বেলা ২টো পর্যন্ত কোথাও কোনও ট্রেন চলাচল করেনি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে। কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হবে এই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। রেল সূত্র খবর, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হচ্ছে ঢাকার ভিতরে কোনও ট্রেন প্রবেশ করবে না এবং ঢাকা থেকে কোনও ট্রেন যাবেও না। কিন্তু বেশির ভাগ ট্রেনই ঢাকায় আসে। ফলে সারা দেশেই রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে রেলের কর্মকর্তারা এই বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ট্রেন চলাচল করলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করতে পারে। এতে আন্দোলনকারীরা ইচ্ছামতো স্থানে ছোট-বড় জমায়েত করতে পারবে। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত সোমবার থেকে ভয়ংকর আকার নিয়েছে বাংলাদেশের কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দিনভর একাধিক অশান্তির ঘটনা ঘটে চলেছে। আক্রান্ত সংবাদমাধ্যমও। সূত্রের খবর, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে জোর করে। মোবাইলে ইন্টারনেট বন্ধের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকে একটি সংস্থার মূল কার্যালয়ের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছে আন্দোলনকারীদের একাংশ। মানুষের কাছে ভুল বার্তা গিয়ে পরিস্থিতি যাতে আরও উত্তপ্ত না হয় সেজন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট। পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন বাংলাদেশের ডাক, টেলি যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। ঢাকায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘‘সমাজমাধ্যমে স্বার্থান্বেষী কয়েকজন নানা গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে চাইছে। তাই সাময়িক ভাবে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে।’’
বাংলাদেশ প্রশাসনের মতে, বৃহস্পতিবার ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে গোটা দেশে। তাদের মধ্যে ১৩ জনই ঢাকার বাসিন্দা। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন হাসান মেহেদি নামে এক সাংবাদিক। তিনি স্থানীয় এক সংবাদপত্রে কর্মরত। তাঁর শরীরে ছররা গুলির দাগ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে। এছাড়াও মৃতদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশকর্মী এবং আন্দোলনকারীরা। উত্তাল বাংলাদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আহতের সংখ্যাও।