shono
Advertisement

লিংকে ক্লিক করলেই মোবাইল-স্ক্রিনে আলোর বন্যা, উধাও টাকা! কলকাতায় সক্রিয় নয়া চক্র

পুলিশের ধারণা, এর পিছনে থাকতে পারে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া গ্যাং।
Posted: 02:55 PM Jan 18, 2022Updated: 02:55 PM Jan 18, 2022

স্টাফ রিপোর্টার: লিংকে ক্লিক করলেই লাফাচ্ছে মেসেজ। পুরো মোবাইলের স্ক্রিন জুড়ে ঝিকমিক করছে আলো। কোন জাদুতে কালো রঙের অক্ষর নিমেষের মধ্যে পালটে হয়ে যাচ্ছে লাল, সবুজ ও আরও রকমারি রং। মোবাইলের এহেন ‘আচরণ’ দেখে অবাক হওয়ারই কথা ব্যবহারকারীর। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে যে, ততক্ষণে তাঁর একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে যাবতীয় টাকা। এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন কলকাতার বহু মানুষ।

Advertisement

সম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মহিলা অধ্যাপকও এই অভিজ্ঞতার কবলে পড়েন। তাঁর দু’টি অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। এই ব্যাপারে তিনি লালবাজারের সাইবার থানায় অভিযোগও দায়ের করেন। গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা, এর পিছনে থাকতে পারে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া গ্যাং (Jamtara Gang)। এই ধরনের জালিয়াতির (Cyber fraud) হাত থেকে বাঁচতে ব্যাঙ্কের অ্যাপ ডাউনলোড করে অনলাইনে টাকা লেনদেনের মাত্রা যথাসম্ভব কমানোর পরামর্শ দিচ্ছেন পুলিশ ও সাইবার বিশেষজ্ঞরা।

[আরও পড়ুন: ই-ওয়ালেটে ফাঁদ পাতছে সাইবার ও ব্যাংক জালিয়াতরা, সোশ্যাল মিডিয়ায় সতর্ক করল লালবাজার]

পুলিশ জানিয়েছে, পদ্ধতি পালটাচ্ছে ব্যাঙ্ক জালিয়াতরা। জালিয়াতির জন্য আগে তারা শুধু নিজেদের ব্যাঙ্ক আধিকারিক বলে পরিচয় দিত। সেই পরিচয় তারা এখনও দিচ্ছে। কিন্তু তার সঙ্গে নিজেদের বিশ্বাসভাজন করে তোলার জন্য ‘টার্গেট’-এর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যও তারা জোগাড় করছে। সম্প্রতি লালবাজারের সাইবার থানায় যে মহিলা অধ্যাপক অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাঁকেও ফোন করে জালিয়াতরা। তাঁর মোবাইলের ‘ট্রু কলারে’ ভেসে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। একই সঙ্গে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিক ও অধ্যাপকরাও জালিয়াতদের দেওয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে কেওয়াইসি আপডেট করেছেন বলে দাবি করে তারা। জালিয়াত তাঁর কয়েকজন সহকর্মীর নামও বলে। নিজেদের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী ও ছুটির দিনেও ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করছেন বলে দাবি তোলে। এভাবে বিভিন্ন সময় নিজেদের বিশ্বাসভাজন করে তোলে জালিয়াতরা। ফলে সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও তিনি জালিয়াতদের পাঠানো লিঙ্কে ক্লিক করেন।

মহিলা অধ্যাপক জানিয়েছেন, লিঙ্ক ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গেই যাবতীয় মেসেজ লাফাতে শুরু করে। পালটাতে শুরু করে মেসেজের রং। প্রচুর মেসেজ আসতে ও মুছে যেতে থাকে। এর পর বন্ধ হয়ে যায় তাঁর মোবাইল ফোন। অন্তত পনেরো মিনিট তিনি মোবাইল খুলতে পারেননি। ফলে কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেননি। যখন মোবাইল খোলা হয়, তখন তিনি দেখেন যে, তাঁর একটি ব্যাঙ্ক থেকে উধাও ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৪০৪ টাকা। তাঁর অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে ৫১ টাকা। পরে দেখেন, অন্য একটি অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে ১৭ টাকা। সেখান থেকে উধাও হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার টাকা। এর পরই তিনি সাইবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

[আরও পড়ুন: ডলারের প্যাকেট পাঠাচ্ছে ‘বিদেশি বন্ধু’, লোভে পড়ে ব্যাংক জালিয়াতির শিকার শিক্ষিকা, খোয়ালেন সর্বস্ব]

পুলিশের মতে, লিঙ্ক ক্লিক করলেই মোবাইল হ্যাক হয়। একটি মিরর অ্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাউনলোড হয়ে যায়। তখনই মোবাইলের স্ক্রিন জুড়ে বইতে থাকে আলোর বন্যা। নিমেষের মধ্যেই মোবাইলের দখল নিয়ে টাকা হাতাতে শুরু করে জালিয়াতরা। তার ফলে যতগুলি ব্যাঙ্কে তাঁর অ্যাকাউন্ট রয়েছে, ততগুলি অ্যাকাউন্ট থেকেই পুরো টাকা তুলে নিতে পারে জালিয়াতরা।

সাইবার বিশেষজ্ঞ হৃত্বিক লাল জানান, বহু বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিজস্ব অ্যাপ থাকে। সেই অ্যাপে উল্লেখ করা থাকে, ব্যাঙ্ক গ্রাহক কত টাকা দিনে ইচ্ছামতো লেনদেন করতে পারেন। সেই অ্যাপ ডাউনলোড করা থাকলে গ্রাহক দিনে যথাসম্ভব কম টাকা লেনদেন করতে পারবেন। তার ফলে জালিয়াতরা মোবাইল হ্যাক করলেও টাকা হাতাতে পারবে না। আবার প্রয়োজনমতো গ্রাহক নিজেও লেনদেনের মাত্রা বাড়িয়ে নিতে পারবেন। যদি কোনও গ্রাহক ভুল করে লিঙ্ক ক্লিকও করেন, তবু এই পদ্ধতি মেনে চললে জালিয়াতরা টাকা তুলতে পারবে না অ্যাকাউন্ট থেকে। এভাবে জালিয়াতি আরও কমানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement