অভিরূপ দাস: কলঙ্কিত রবীন্দ্রনাথ! তাও বাঙালির হাতে! কবিগুরুকে নিয়ে লেখা বইয়ের প্রচ্ছদে পুরুষাঙ্গের আদলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে (Rabindranath Tagore) উপস্থাপিত করা হয়েছে। এই ঘটনায় নিন্দায় সরব হয়ে উঠেছে নাগরিক সমাজ। ঝড় উঠেছে সোশাল মিডিয়ায়। সিংহভাগেরই বক্তব্য, মানসিকতায় আর কত অবনমন দেখব। যিনি বাঙালির মননশীলতার ভিত। বিকৃত রুচির লোকজন সেই কবিগুরুকেও ছাড় দিল না!
বিতর্কিত বইটির নাম, ‘রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনী।’লেখক পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। অভিযোগ উঠছে, সে বইয়ের প্রচ্ছদে কদর্য রূপে আঁকা হয়েছে কবিগুরুকে। প্রকাশক সুমন ভৌমিক নিজেই সে ছবি দিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে (Social Media)। লিখেছেন, সূত্রধর প্রকাশনা থেকে শীঘ্রই প্রকাশিত হতে চলেছে বইটি। সামাজিক মাধ্যমে বইয়ের ছবি দিতেই তুমুল শোরগোল। ছি ছি করছে বঙ্গকুল। চিকিৎসক ডা. শুভ শঙ্কর রায় লিখেছেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এত নোংরামি করা লোকেদের রুচি আর বংশপরিচয় নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে।’’ রিয়েলিটি শোয়ের গায়িকা চন্দ্রিকা বিশ্বাসের কথায়, ‘‘যাঁরা বইয়ের এই প্রচ্ছদ বানিয়েছেন তাঁদের মানসিক সুস্থতা কামনা করি।’’
[আরও পডুন: ‘খলিস্তান জিন্দাবাদ’, মেট্রো স্টেশনে লেখা স্লোগান ঘিরে শোরগোল রাজধানীতে]
এদিকে যাঁদের প্রকাশনা নিয়ে এতকিছু, অদ্ভুতভাবে তারা নির্বাক। সংবাদ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল প্রকাশক সুমন ভৌমিকের সঙ্গে। কে এই কদর্য প্রচ্ছদ এঁকেছেন তা নিয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি। সুমনবাবুর বক্তব্য, ‘‘লেখক এবং প্রকাশকের পক্ষ থেকে আমরা যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই বিষয়ে আমরা কিছু অবগত করবে না।’’ তবে সামাজিক মাধ্যমের সমালোচনাকে প্রকাশক যে গায়ে মাখছেন না তা তিনি পরিস্কার করে দিয়েছেন। সুমনবাবুর যুক্তি, ‘‘সামাজিক মাধ্যমে কোনও কিছুকে কেন্দ্র করে কেউ কিছু বলতে পারেন। তার প্রতি উত্তরে অগণিত মানুষ আরও কিছু বলতে পারেন। সবার কথার যদি প্রত্যুত্তর দিতে হয় তাহলে দিনে অন্য কোনও কাজ করা যাবে না। লোকের উত্তর দিতে দিতেই সময় চলে যাবে।
[আরও পডুন: আপনিই কি ইন্ডিয়া জোটের প্রধানমন্ত্রী মুখ? সোজাসাপ্টা জবাব দিলেন কেজরি]
তবে রবীন্দ্রনাথের এমন বিকৃত ছবি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কোন চিন্তা ভাবনায় রবীন্দ্রনাথকে পুরুষাঙ্গের আদলে আঁকা হল? তা কি স্রেফ বইটির নেতিবাচক প্রচারের জন্য? সুমন ভৌমিকের যুক্তি, ‘‘ইতিবাচক আর নেতিবাচক কে ঠিক করে দেয়? জগতে সবকিছুই আপেক্ষিক। হয়তো এই প্রচ্ছদে অধোগামী হচ্ছি বলেই উর্ধ্বগামিত্বের প্রবল অভিপ্সা আমার মধ্যে নাড়া দিচ্ছে।’’
[আরও পডুন: মোদির ‘মঙ্গলসূত্র’ থেকে মমতার হিন্দি শায়েরি, রচনা-দিলীপের ডায়লগে জমজমাট বাংলার ভোট]
গোটা ঘটনায় মর্মাহত বাংলার রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পীরা। গীতবিতানের সমস্ত গান গেয়ে রেকর্ড তৈরি করেছেন শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত। কবিগুরুকে নিয়ে এধরণের 'ছ্যাবলামো' তাঁকে পীড়া দিয়েছে। শিল্পীর কথায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাউন্ট এভারেস্টের মতো উঁচু। এই ধরণের কদর্যতা তাঁকে ছুঁতে পারবে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে রবীন্দ্রনাথ সুন্দরের পুজারি ছিলেন। যাঁরা তাঁকে ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন তাঁরাও সুন্দরের পূজারি। কবিগুরুকে নিয়ে এই ধরণের কুৎসিত চিত্রর তীব্র প্রতিবাদ করছি।