স্টাফ রিপোর্টার, কাটোয়া: সাত বিঘা জমিতে স্কুল ক্যাম্পাস। দোতলা ভবনে পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ। তবে স্কুল চলাকালীন পাশ দিয়ে গেলেও কানে আসে না পড়ুয়াদের কোলাহল। কারণ স্কুলে ছাত্রী মাত্র একজন।
কাটোয়া ২ ব্লকের সিঙ্গি কাশীরাম দাস জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয় চলছে এক ছাত্রীকে নিয়েই। স্কুলে একজন অতিথি শিক্ষক, একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। পড়ুয়া সংখ্যা বাড়াতে তৎপর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকজন গ্রামবাসী। অভিভাবকদের কাছে মেয়েদের ভর্তি করানোর আবেদন জানাচ্ছেন তাঁরা। এলাকায় টাঙানো হয়েছে ব্যানার, ফ্লেক্স।
২০১০ সালে সিঙ্গি কাশীরাম দাস জুনিয়র বালিকা বিদ্যালয়ের পথ চলা শুরু। সিঙ্গি বাসস্ট্যাণ্ডে কাশীরামদাস পাঠাগারের পিছনে প্রায় ৭ বিঘা জমির উপর এই স্কুল। গ্রামবাসী জানাচ্ছেন, স্কুল শুরুর পর অনেক ছাত্রী এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন-পাঠন হত। প্রথমদিকে দেড়শোর বেশি ছাত্রী ছিল। তার পর কয়েক বছরের মধ্যে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে থাকে। ২০২০ সালের পর থেকে স্কুলটি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সূত্রের খবর, কয়েকজন 'অতিথি' শিক্ষকের মামলার কারণে তালা পড়ে স্কুলে।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নাজিবুলহক মল্লিক বলেন, "শুরুর দিকে স্বাভাবিকভাবেই স্কুল চলছিল। দেড়শোর বেশি ছাত্রী ছিল। ২০২০ সালে মামলা মোকদ্দমার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যায় ৷ স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে যায় সরকারি বিভিন্ন অনুদানও। চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ফের স্কুল চালু হয়েছে। ভর্তি হয় এক ছাত্রী।"
স্কুলের একমাত্র ছাত্রী আরাধ্যা সর্দার। পঞ্চম শ্রেণির এই ছাত্রীর জন্যই নিয়মমাফিক স্কুল খোলা হচ্ছে। ওই ছাত্রীর জন্য চালু আছে মিড-ডে মিলও। স্কুলে বাজে ঘণ্টাও। তবে কোলাহল নেই। শিক্ষক বলেন, "স্কুলে ফের পড়ুয়াদের আনতে আমরা বৈঠক করেছি। সিঙ্গি গ্রাম-সহ আশপাশের হাটেবাজারে ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে। পাশের গ্রাম মুলটি, গৌড়ডাঙা, ওকড়সা গ্রামেও প্রচার করছি। লিফলেট বিলিও করা হচ্ছে। এটি এলাকার একমাত্র জুনিয়র গার্লস হাইস্কুল।" নতুন বান্ধবীদের পাওয়ার আশায় রয়েছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আরাধ্যা সর্দারও। তার কথায়, "স্কুলে একা একা ভালো লাগে না। এখন স্কুলে আমার কোনও বন্ধু নেই। নতুন বান্ধবীদের পেলে খুব ভালো হবে।"
আগামী বর্ষে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি থেকে। এবার এই স্কুলে পড়ুয়া চাইছে শিক্ষা বিভাগও। তবেই স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হবে। কাটোয়া পূর্ব চক্রের স্কুল পরিদর্শক শুভজিৎ মণ্ডল বলেন, "আশা করছি নতুন বছরে ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়বে।"