অর্ণব আইচ: কিছুদিন আগেই কলকাতা থেকে পাচার হয়েছে আরও একটি শিশু। গত দু’বছরের মধ্যে নিজের গর্ভ ভাড়া দিয়ে দু’টি শিশু পাচার করেছে মমতা পাত্র নামে ধৃত ‘সারোগেটেড’ মা। সেই সূত্র ধরেই আনন্দপুরে শিশু পাচার কাণ্ডে উঠে এল এক চিকিৎসকের নাম। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ওই চিকিৎসককে ইতিমধ্যেই পুলিশ জেরা করেছে। ওই চিকিৎসক শিশু পাচার হচ্ছে জেনে ওই অন্তঃসত্ত্বাদের প্রসব করাতেন কি না, পুলিশ আধিকারিকরা তা জানার চেষ্টা করেন।
আনন্দপুরের নোনাডাঙা থেকে শিশু পাচার করার অভিযোগে ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই ‘মা’ এবং চারজন এজেন্ট-সহ মোট ৬ জন মহিলাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পর্ণশ্রী থেকে উদ্ধার হয় শিশুকন্যা। এছাড়াও এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ডায়াগনাস্টিক সেন্টারের কর্মী গোলাম আম্বিয়া ও চক্রের এক মাথা মমতা পাত্রকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। বৃহস্পতিবার এই আটজনকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে তাদের ১১ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীনের শহিদবেদি এলাকা থেকে ধৃত স্বপ্না সর্দার রীতিমতো দাগী শিশু পাচারকারী।
তার বিরুদ্ধে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নরেন্দ্রপুর থানা ও কোচবিহারে শিশু পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত মহিলা ও তার স্বামী দু’জন মিলে শিশু পাচার করার জন্যই ঘন ঘন ঠিকানা পালটাত। তাই তাকে অনেক সমস্যার মধ্যেই পুলিশকে গ্রেপ্তার করতে হয়। আবার এদিনই পূর্ব কলকাতার মানিকতলা থানা এলাকার খালে একটি সদ্যোজাত শিশুর দেহ উদ্ধার ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে দেহটি পুলিশ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।
[আরও পড়ুন: একই বিছানায় ঘুমন্ত অবস্থায় কালাচের বিষাক্ত ছোবল! দম্পতির ‘সহমরণ’]
এদিকে, গর্ভ ভাড়া দিয়ে যে মহিলা শিশু পাচার করত, সেই মমতা পাত্রকে জেরা করেও চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে পুলিশের হাতে। পুলিশ জেনেছে, আইভিএফ সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে এর আগে চার বার গর্ভ ভাড়া দেয় মমতা পাত্র। তার জন্য ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে নিত সে। জন্ম দেওয়ার পর ওই চারটি শিশুকে কোথায় পাচার করা হয়েছে, তা নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ শিশুটিকে পাচার করা হয়েছে গত এক সপ্তাহে। সম্প্রতি মমতা পাত্র শিশুটির জন্ম দেয়। ওই শিশুটিকে উদ্ধার করার চেষ্টা হচ্ছে। পুলিশ জেনেছে, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন মহিলাকে দিয়ে গর্ভধারণ করিয়ে বহু শিশুর জন্ম দিয়েছে এই চক্রটি। এরপর সেগুলি কলকাতা বা অন্যান্য জেলা ছাড়াও ভিনরাজ্যেও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে, এমনও খবর এসেছে পুলিশের কাছে।
নোনাডাঙার যে মহিলা রূপালি মণ্ডলের কাছ থেকে রূপা নামে অন্য অভিযুক্ত শিশুটি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিল, তারই মধ্যস্থতাকারী ছিল মমতা পাত্র। তার সঙ্গে রূপার পরিচয় হয় একটি আইভিএফ সেন্টারের মাধ্যমে। ওই অভিযুক্তদের মধ্যে যারা তুলনামূলক কমবয়সি, তারা নিজেদের ডিম্বাণুও বিক্রি করত। কলকাতায় ডিম্বাণু বিক্রির জন্য তারা ২০ হাজার টাকা করে নিত। যদিও তাদের টার্গেট ছিল শিলিগুড়ি ও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি আইভিএফ সেন্টার। কারণ, উত্তরবঙ্গের ওই সেন্টারগুলিতে ডিম্বাণু বিক্রি করে তারা ৪০ হাজার টাকা করে পেত। ফলে কলকাতার সঙ্গে সঙ্গে এবার উত্তরবঙ্গের কয়েকটি আইভিএফ সেন্টারেও হানা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।