shono
Advertisement

মাছের ভেড়িতে বেআইনিভাবে বিদ্যুতের ‘ফাঁদ’, ঝিলে নেমে মৃত্যু ব্যক্তির, শোরগোল ময়নায়

বেআইনি 'মৃত্যুফাঁদ' নিয়ে সরব স্থানীয় বাসিন্দারা, পলাতক অভিযুক্ত।
Posted: 08:29 PM Apr 21, 2023Updated: 08:33 PM Apr 21, 2023

সৈকত মাইতি, তমলুক: মাছ চুরি আটকাতে মাছের ভেড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে ফাঁদ পেতে রেখেছিল মালিকপক্ষ। প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়ে সেই তারেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল স্থানীয় এক বৃদ্ধের। শুক্রবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের (East Midnapore) ময়না থানার রসিকপুর এলাকার এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের পরিবার।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়না (Moyna) থানার গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অন্তর্গত রসিকপুর গ্রাম। প্রত্যন্ত এই গ্রামের রসিকপুর মৌজাতেই কয়েক বিঘা এলাকাজুড়ে বছর ছয়েক আগে মাছের ভেড়ি তৈরি করে চাষ শুরু করেছিলেন পাশের দক্ষিণ চংরা এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী অনির্বাণ ঘাটা। কিন্তু রাতের অন্ধকারে তাঁর মাছের ভেড়ি থেকে মাছ চুরি হয়ে যাচ্ছিল, এমন অভিযোগ তুলে চোর ধরার পরিকল্পনা করে মালিকপক্ষ। তাই বেআইনিভাবে মাছের ভেড়ির চারপাশে জিআই তার রেখে তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ ঘটাতেও পিছুপা হয়নি তারা।

[আরও পড়ুন: ‘কোষাগারে টান’, নবান্নে ডিএ বৈঠকে রফাসূত্র মিলল না, ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা]

প্রতিদিনের মতো শুক্রবারও সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে স্থানীয় একটি বাজারে চা খেতে বেরিয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দা সৃষ্টিধর জানা। পথে ঝিলের পাড়ে তিনি জামা এবং ব্যাগ খুলে রেখে প্রাতঃকৃত্য সারছিলেন। সেখানেই তিনি জলশৌচ করতে যান। বেআইনিভাবে এই খোলা বিদ্যুতের সংযোগযুক্ত তারে আটকে পড়ে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট (Electrocuted) হন। পরে ঘটনার খবর পেয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য তমলুক মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে পাঠায় ময়না থানার পুলিশ।

এদিকে এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের পরিবার। এদিকে এই ঘটনায় সমস্ত অভিযোগের আঙুল উঠেছে ঝিল মালিকের বিরুদ্ধেই। ঘটনা তদন্ত নেমে অভিযুক্ত ওই ঝিল মালিকের অস্থায়ী ঘরটিতে সিল করে দিয়েছে ময়না থানার পুলিশ। এদিকে ঘটনার পর থেকেই এলাকাছাড়া হয়েছেন অভিযুক্ত ঝিল মালিক এবং তাঁর সঙ্গীরা। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী, মাছের ভেড়িতে যদি কোনও পানকৌড়িও নামে, তবু তাকে হত্যা করা যায় না। কিন্তু এক্ষেত্রে যেভাবে বর্বরোচিত, একেবারে বেআইনিভাবে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে বিদ্যুতের সংযোগ ঘটিয়ে ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছিল, তা একেবারে অমানবিক। আর তার বলি হতে হল সাধারণ এক গ্রামবাসীকেই।

[আরও পড়ুন: তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার পুকুর ‘শুদ্ধিকরণে’র চেষ্টা, বিজেপির বিরুদ্ধে FIR]

এদিকে তমলুক মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে মৃতদেহটি ময়না তদন্তের পর এদিন বিকেলে পরিবারের হাতে তুলে দেয় পুলিশ। মৃতের আত্মীয় গণেশ জানা বলেন, ”এমন ঘটনা একেবারেই অমানবিক এবং যেটা খুনের চক্রান্তের সমান। আমরা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।” ময়না থানার আইসি কৃষ্ণেন্দু প্রধান জানান, মাছের ভেড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। এরপর পরিবারের অভিযোগ এবং ময়নাতদন্তের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত এই ময়না মাছ চাষের দিক থেকে আজ রাজ্যের মধ্যে উদাহরণ হয়ে উঠেছে। প্রায় বছরভর বিভিন্ন প্রকারের জ্যান্ত মাছ গাড়িতে চড়ে রাজ্যের পাশাপাশি ভিন রাজ্যেও রপ্তানি করা হয়ে থাকে প্রত্যন্ত এই ময়না এলাকা থেকে। কিন্তু তারপরেও এমন ঘটনা সত্যিই অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন সব পক্ষই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার