shono
Advertisement

গ্রাহকের অজান্তেই ব্যাংক লোন! একরাতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল জালিয়াত

বউবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রতারিত ব্যাক্তি।
Posted: 08:33 PM Aug 08, 2023Updated: 08:33 PM Aug 08, 2023

অর্ণব আইচ: ব‌্যাংক অ‌্যাকাউন্ট ফাঁকা করেও থামেনি জালিয়াত। গ্রাহকের অজান্তেই তাঁর নামে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়া হয়। সেই টাকা অ‌্যাকাউন্টে এসে জমা পড়ার পর সারা রাত ধরে প্রায় ৯৫ বার পাঁচ হাজার টাকা করে তুলে নেয় অভিযুক্ত। সম্প্রতি এই ব‌্যাপারে মধ‌্য কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী বউবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

Advertisement

বিষয়টা ঠিক কী? গত শনিবার বিকেলে অভিযোগকারীর মোবাইলে একটি ফোন আসে। অজ্ঞাতপরিচয় এক ব‌্যক্তি তাঁকে বলে, তাঁর ক্রেডিট কার্ড লক করে দেওয়া হবে। তা চালু করার জন‌্য বিশেষ কয়েকটি পদ্ধতি মানতে হবে। প্রথমেই তাঁর মোবাইল থেকে অ‌্যাক্সিস ব‌্যাংকের অ‌্যাপটি উড়িয়ে দিতে হবে। তার বদলে ডাউনলোড করতে হবে এনি ডেস্ক নামে অ‌্যাপটি। অভিযোগকারী ক্রেডিট কার্ড লক হয়ে যাওয়ার ভয়েই তাঁর প‌্যান নম্বর, ব‌্যাংকের কিছু তথ‌্য পাঠিয়ে দেন। এরপর তিনি মোবাইল থেকে ব‌্যাংকের অ‌্যাপ মুছে দিয়ে এনি ডেস্ক অ‌্যাপ ডাউনলোড করেন। এমনকী, ওই অজ্ঞাতপরিচয় ব‌্যক্তিকে ওটিপিও পাঠিয়ে দেন তিনি। অভিযোগকারীর অজান্তেই মিরর অ‌্যাপটির মাধ‌্যমে তাঁর মোবাইলের সম্পূর্ণ দখল নিয়ে নেয় জালিয়াত। প্রথমে তাঁর অ‌্যাকাউন্ট থেকে ৩৪ হাজার ৪৭৬ টাকা তুলে নেয় সে। এরপর অভিযোগকারীর নামেই তাৎক্ষণিক ঋণের আবেদন করা হয়। অ‌্যাক্সিস ব‌্যাংক সেই ঋণ অনুমোদন করে কয়েক ঘণ্টায়। রাতে তাঁর ব‌্যাংক অ‌্যাকাউন্টে এসে ঋণ বাবদ জমা হয় ৪ লক্ষ ১৪ হাজার ৫৮৪ টাকা। তখন তাঁর ব‌্যাংক অ‌্যাকাউন্টে ছিল ৪ লক্ষ ৪৯ হাজার ৬০ টাকা।

[আরও পড়ুন: কুড়মি সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী, ঝাড়গ্রামে পৌঁছেই বৈঠকে বসলেন নেতাদের সঙ্গে]

রাত ১১টা ৫৬ মিনিট থেকে প্রায় সারা রাত ধরেই জালিয়াত পাঁচ হাজার টাকা করে তুলতে শুরু করে। রাত দু’টোর মধ্যে অ‌্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দেয় সে। অ‌্যাকাউন্টে পড়ে থাকে মাত্র ৬০ টাকা। যেহেতু অ‌্যাক্সিস ব‌্যাংকের অ‌্যাপটি তিনি মোবাইল থেকে মুছে ফেলেছিলেন, তাই কোনও মেসেজও তাঁর মোবাইলে আসেনি। পরেরদিন বেলার দিকে টাকা তোলার সময় বুঝতে পারেন যে, তাঁর ব‌্যাংক অ‌্যাকাউন্ট থেকে পুরো টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে। এরপর তিনি ব‌্যাঙ্কে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন যে, তাঁর নাম করে ঋণ নিয়ে সেই টাকা জালিয়াত তুলে নিয়েছে। ইতিমধ্যেই অভিযোগকারী অ‌্যাক্সিস ব‌্যাংকে আবেদন করে জানিয়েছেন তিনি আদৌ ওই ঋণ নেননি। তাই ঋণের টাকা মেটানোও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। ওই টাকা একটি বিশেষ ই-ওয়ালেটে ট্রান্সফার করা হয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে। কীভাবে কোনও নথি ছাড়াই অল্প সময়ের মধ্যে এই পরিমাণ টাকা ব‌্যাংক ঋণ দিল, তা নিয়েও পুলিশ প্রশ্ন তুলেছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, যে সিমকার্ডের ভিত্তিতে ওই ই-ওয়ালেটটি তৈরি করা হয়েছে, সেটি মুম্বইয়ের বাসিন্দা নকুল ব‌্যাসের নামে। ওই সিমকার্ডটি প্রি অ‌্যাকটিভেটেড অথবা জাল বলেই ধারণা পুলিশের। আবার যে ব‌্যক্তি অভিযোগকারীকে ফোন করেছিল, তার নাম রাহুল মুখোপাধ‌্যায়। সেই নামও যে জাল, সেই বিষয়েও পুলিশ নিশ্চিত। মোবাইলের সূত্র ধরেই ব‌্যাংক জালিয়াতের সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের মতে, এই জালিয়াতির নেপথ্যে রয়েছে ‘মিরর অ‌্যাপ’। ‘এনি ডেস্ক’-এর মতো মিরর অ‌্যাপ ডাউনলোড করিয়েই জালিয়াতি করছে ব‌্যাংক জালিয়াতরা। পুলিশের পরামর্শ, কেউ লিংক পাঠালে কেউ যেন তাতে ক্লিক না করেন। ইউআরএল কোড পাঠানো হলেও যেন তাতে কেউ স্ক‌্যান না করেন। কারও কথায় কেউই যেন কোনও রকমের অ‌্যাপ ডাউনলোড না করেন। যদি কেউ ডাউনলোড করেও ফেলেন, তিনি যেন কোনওভাবেই ওটিপি কাউকে না জানান। তাতেই রোখা যেতে পারে জালিয়াতি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement