অর্ণব আইচ: মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগ। নদিয়া থেকে গ্রেপ্তার জয়িতা দাস নামে এক ছাত্রী। বুধবারই আদালতে তোলা হয় ধৃতকে। তাঁকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ২০১৩ সালে দক্ষিণ কলকাতার চারু মার্কেট থানা এলাকা থেকে এসটিএফের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন জয়িতা। ফের তিনি গ্রেপ্তার হলেন গোয়েন্দা পুলিশের হাতে।
পুলিশ জানিয়েছে, কিছুদিন আগে ময়দান এলাকার বাসস্ট্যান্ডে একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই ব্যাগটির ভিতর ছিল বেশ কিছু লিফলেট, ডিভিডি, হাতে লেখা পোস্টার ও মাওবাদী পুস্তিকা। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা জিনিসগুলি উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফের হাতে তুলে দেন। গোয়েন্দারা তদন্ত করে কিছু তথ্য ও নথি পান। ডিভিডিগুলি খতিয়ে দেখা হয়। সেগুলির সূত্র ধরেই মুর্শিদাবাদের দুই যুবকের সন্ধান মেলে। এসটিএফের কাছ থেকে খবর পেয়ে মুর্শিদাবাদ (Murshidabad) জেলার পুলিশ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় অস্ত্র। তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে কিছু মাওবাদী পুস্তিকা ও হাতে লেখা পোস্টার উদ্ধার করা হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, কলকাতা থেকে উদ্ধার হওয়া ওই হাতে লেখা পোস্টারের সঙ্গে মিল ছিল মুর্শিদাবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া মাওবাদীদের পোস্টারগুলির। সেই সূত্র ধরেই তাদের জেরা শুরু হয়। জেলা পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের জেরা করেন কলকাতা পুলিশের এসটিএফ আধিকারিকরাও।
[আরও পড়ুন: সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের খবরের জের, প্রশাসনিক তৎপরতায় শিকলমুক্ত ‘অসুস্থ’ যুবক]
জেরার মুখে ধৃতরা গোয়েন্দাদের জানায় যে, তারা পোস্টার ও মাওবাদী পুস্তিকাগুলি নিয়ে এসেছে নদিয়ার ছোট জাগুলিয়া থেকে। ধৃতরা স্বীকার করে যে, মাওবাদী নেত্রী জয়িতা দাসই এগুলি তাদের দিয়েছে। সেইমতো ছোট জাগুলিয়ার একটি বাড়িতে হানা দেন গোয়েন্দারা। সেই বাড়ি ঘিরে ফেলে ভিতর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় জয়িতাকে। এখানেই আশ্রয় নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে থাকছিল সে।
[আরও পড়ুন: কলেজ স্ট্রিটের আদলে এবার দার্জিলিংয়েও কফি হাউস, পর্যটক টানতে নয়া উদ্যোগ মুখ্যমন্ত্রীর]
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, মাওবাদীদের মাতঙ্গিনী মহিলা সমিতির নেত্রী ছিলেন জয়িতা। নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সময় তাঁর নাম উঠে আসে। তখনই গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, মাওবাদীদের ছাত্র সংগঠন ইউএসডিএফ-এর সক্রিয় সদস্যা ও ক্রমে নেত্রী হন জয়িতা। কলকাতার সিটি কমিটির নেত্রী হন তিনি। কলকাতায় মাওবাদীদের ‘মুখোশ সংগঠন’গুলির মাধ্যমে আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। অভিযোগ, নোনাডাঙায় জমি আন্দোলনের পিছনে ছিলেন তিনি। এর সঙ্গে কলকাতায় মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ করার পিছনেও ছিলেন তিনি। বহুবার জঙ্গলমহলে গিয়ে মাওবাদী শীর্ষনেতাদের সঙ্গে জয়িতা বৈঠক করেছিলেন। প্রথমবার গ্রেপ্তারির পর তাঁর বিরুদ্ধে ইউএপিএ লাগু করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা, জয়িতার সঙ্গে সঙ্গে অন্য কয়েকজন পুরনো মাওবাদী নেতা ও নেত্রী সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। জয়িতাকে জেরা করে সেই তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।