অভিরূপ দাস: স্নায়ুর সমস্যা। সোডিয়াম পটাশিয়ামের ওঠানামা। দেহের ব্যালান্স হারানো। সবকিছু ভুলে যাওয়া। প্রেসার, সুগার, কানে কম শোনা, চোখে কম দেখা ইত্যাদি তো আছেই। প্রবীণত্বের দোরগোড়ায় পৌঁছে এমন নানা সংকটে জেরবার হয় শরীর। কীভাবে সেসব ঠেকানো যায়? বয়সজনিত রোগে মৃতের ময়নাতদন্ত তার উত্তর দিতে পারে। সেই আশায় বুক বেঁধে কলকাতায় এই প্রথম হতে চলেছে জেরিয়্যাাট্রিক প্যাথলজিক্যাল অটোপসি, আজ বৃহস্পতিবার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে (R G Kar Medical College and Hospital)।
পুরো উদ্যোগটির নেপথ্যে রয়েছেন দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় নামে সদ্য প্রয়াত সেই বৃদ্ধ, যাঁর দেহ এই উদ্দেশ্যে দান করা হয়েছে বুধবার। বয়স্ক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। গবেষণা যত হবে, লড়াই সহজ হবে বয়সজনিত নানা অসুখের বিরুদ্ধে। বাড়বে গড় বয়স। বছর তিনেক আগে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন স্টাডিজ এক সমীক্ষা চালিয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছিল, পুরুষদের মৃত্যুর গড় বয়স ৬৯.৫ মহিলাদের ক্ষেত্রে তা ৭২। মাঝে করোনার কারণে তা নেমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৬৭.৫ এবং ৬৯.৮ এ। নয়া এই অটোপসির ফলে ফের উল্টোপথে ঘুরবে সাইকেল? বয়স্করোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যাথলোজিকাল অটোপসি বা রোগনির্ণয়ে মৃতদেহের কাটাছেঁড়া জাপানে অহরহ। যে কারণে সে দেশে গড় আয়ু ৮৪। খুব দ্রুত বাংলাও ছোঁবে সেই মাইলস্টোন।
[আরও পড়ুন: বিদ্রোহী নেতাদের সুরে অসন্তোষ বহু বিধায়কেরও, তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকল বঙ্গ বিজেপি]
কোভিড সংক্রান্ত গবেষণায় প্যাথোলজিকাল অটোপসি হলেও বয়সজনিত কারণে মৃত্যুতে ময়নাতদন্ত এই প্রথম। বয়স্করোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কৌশিক মজুমদারের কথায়, বয়সজনিত কারণ বলে কিছু হয় না। কোনও না কোনও নির্দিষ্ট কারণের জন্যেই মৃত্যু হয় প্রবীণদের। কারও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। বয়সের সঙ্গে গতিবিধি শ্লথ হয়ে যাওয়ায় অনেকে পড়ে যান। হৃদরোগে আক্রান্ত হন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের ধূসর কোষ নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
নানারকম কগনিটিভ সমস্যা দেখা যায়। স্নায়ুর সমস্যার জন্য হাত পা কাঁপে। পড়েও যান অনেকে। মৃত্যুর নেপথ্যে এইসব কারণই থাকে। সত্তোরোর্ধ দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বালিগঞ্জ জামির লেনের বাসিন্দা। ৭ মার্চ মারা যান তিনি। তাঁর একমাত্র কন্যা সুচেতনা বন্দ্যোপাধ্যায় বাবার দেহ পুড়িয়ে ফেলতে নারাজ। তিনি চান মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত হোক। সুচেতনা যোগাযোগ করেন গণদর্পনের সঙ্গে। মরণোত্তর দেহদান সংক্রান্ত কাজে অগ্রণি এই সংস্থা। সংস্থার সম্পাদক শ্যামল চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, যেকোনও রোগের মৃত্যুর ক্ষেত্রেই রোগ নির্ণায়ক ময়নাতদন্ত অত্যন্ত জরুরি।