সুব্রত বিশ্বাস: এগারো বছর আগে জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডে (Jnaneswari Express train derailment) মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছিল এক যাত্রীর। সেই মতো ক্ষতিপূরণও পেয়েছিল পরিবার। পেয়েছিলেন নগদ চার লক্ষ টাকা। এমনকী, পরিরবারের একজন রেলের চাকরিও পেয়েছিল। এগারো বছর পর মৃত সেই যাত্রীকে ‘জীবিত’ অবস্থায় ধরল সিবিআই (CBI)।
জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন অমৃতাভ চৌধুরী। কলকাতার জোড়াবাগান এলাকার বাসিন্দা। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অনেকেই। তবে সবাইকে শনাক্ত করা যায়নি। যেমন চেনা যায়নি অমৃতাভ চৌধুরীর দেহও। এরপরে ডিএনএ রিপোর্ট জমা পড়ার পর অমৃতাভর মৃত্যু নিশ্চিত করে তাঁর পরিবারের লোকজনকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দক্ষিণ-পূর্ব রেল নগদ ৪ লক্ষ টাকা দেয়। অমৃতাভর বোন মহুয়া পাঠককেও রেলে চাকরি দেওয়া হয় বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ড নিয়ে বহু জল গড়ায় রাজ্য রাজনীতিতে। এদিকে নগদ অর্থ ও বিবাহিত বোনের চাকরি একসঙ্গে হাতে আসায় অমৃতাভ জীবিত থাকার খবর ঘুণাক্ষরেও প্রকাশ করেনি পরিবার।
[আরও পড়ুন: জনসেবায় প্রতিযোগিতা? ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’-এর পালটা তৃণমূলের ‘নীল ওয়ারিয়রস’]
এগারো বছর কেটে যাওয়ায় তা বিস্মৃতির অতলে চলে যায়। কিন্তু ‘পাপ বাপকেও ছাড়ে না’ এই প্রবাদ সত্যি হয়ে ওঠে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের চোখে। মহুয়ার চাকরির বৃত্তান্ত অনেকের জানা থাকায় ‘দাদা’ সম্পর্কে কথা পাড়ায় সন্দেহ হয় তাঁদের। এরপর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ভিজিল্যান্স দপ্তর তদন্ত শুরু করে বলে সূত্রের খবর। কিছুদিন আগে ভিজিল্যান্স সিবিআইকে অভিযোগ জানিয়ে তদন্তের আবেদন করে। শনিবার সিবিআই অমৃতাভ চৌধুরী ও তার বাবা মিহির চৌধুরীকে আটক করে দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করায় বিষয়টি স্পষ্ট হয়। ডিএনএ রিপোর্ট দাখিলের পর ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল। সেই ডিএনএ রিপোর্ট নিয়ে সন্দিহান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
রেলের একটি সূত্রের দাবি, ডিএনএ পুলিশ দেয়। রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত তারা, ফলে এক্ষেত্রে রেলের গাফিলতি নেই। সেই রিপোর্ট দেখেই ক্ষতিপূরণ দিয়েছে রেল। দক্ষিণ পূর্ব রেলের ভিজিল্যান্সের চিফ এসডিজিএম জানিয়েছেন, বহুদিনের মামলা ফলে তাঁর বিষয়টি অজানা। একই কথা বলেন ওই রেলের সিপিআরও। তিনি বলেন, “মামলাটি বহু পুরনো তাই খতিয়ে দেখা হবে।” অমৃতাভ চৌধুরির বোন মহুয়াদেবী এখন শিয়ালদহের সিনগন্যাল অ্যান্ড টেলিকম বিভাগে কর্মরত বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই। দীর্ঘ এগারো বছর জীবিত থেকেও মৃত পরিচয় দিয়ে সরকারি টাকা ও চাকরি ভোগ করার জন্য আইনগত সবরকমের পদক্ষেপ নিচ্ছে সিবিআই। ডিএনএ রিপোর্ট আসল না নকল তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি কেউ এই অপরাধে জড়িত কী না তাও দেখছেন তারা।