সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উন্নয়নের স্বর্ণযুগই হবে ‘অমৃত কাল’। আর সেই উত্তরণের পথে কর্মসংস্থানই (Employment) অগ্রাধিকার বলে ঘোষণা করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। কিন্তু হাতে গরম তথ্য সাক্ষী, মোদির সেই স্বপ্নের উড়ান এদেশে ইদানীং নেহাতই মরীচিকা। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাওয়াই দায়। পেলেও তার জন্য বিস্তর কাঠখড় পোড়ানোই যেন দস্তুর। তাই স্রেফ হতাশায় গোটা ভারতে কর্মক্ষম ৯০ কোটি মানুষের অর্ধেকের বেশি ইদানীং চাকরি খোঁজা ছেড়ে দিয়েছেন। আর মহিলাদের মধ্যে এই প্রবণতা রীতিমতো উদ্বেগজনক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। মুম্বইয়ের বেসরকারি সমীক্ষা সংস্থা ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি’র ( Centre for Monitoring Indian Economy) তরফে প্রকাশিত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য।
তবে কি করোনার জেরেই কর্মসংস্থানের এই হতাশাজনক চালচিত্র? তথ্য সাক্ষী, ঘটনা কিন্তু আদৌ তেমন নয়। কর্মক্ষম তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে বিশ্বের দ্রুততম বিকাশশীল অর্থনীতি হিসাবে বেড়ে ওঠার স্বপ্ন কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা ফেরি করে চলেন হামেশাই। কিন্তু সমীক্ষার নথি কার্যত উলটো ছবিই মেলে ধরছে। ২০১৭ সালে তো করোনার নামগন্ধ ছিল না। সেই সময় থেকেই শুরু। তারপর পরবর্তী পাঁচ বছরে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের হার ৪৬ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশে। মহিলাদের মধ্যে এই প্রবণতা আরও মারাত্মক। ওই পাঁচ বছরে ধাপে ধাপে প্রায় দু’কোটি মহিলা কর্মক্ষেত্র থেকে সরে গিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: চরমে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব! আরজেডি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা লালুপুত্র তেজপ্রতাপের]
নথি বলছে, কর্মক্ষম মহিলাদের মধ্যে এখন মাত্র ৯ শতাংশ আপাতত কাজে যুক্ত রয়েছেন কিংবা কাজ খুঁজছেন। যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না মেলায় দেশের কমবেশি ৯০ কোটি কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে অর্ধেকই আর কাজ চান না বলেও চাঞ্চল্যকর তথ্য মেলে ধরেছে ওই সংস্থা। এর দ্বিমুখী পরিণতির পূর্বাভাসও মেলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, এর ফলে কর্মক্ষম তরুণ প্রজন্মের সার্বিক অবদানের ডিভিডেন্ড পাওয়া থেকেই বঞ্চিত হবে গোটা দেশ। সর্বোপরি মাঝামাঝি আয়ের আবর্তে বাঁধা পড়বে দেশের আমজনতা, যা সমাজে অসাম্য আরও বাড়িয়ে তুলবে।
[আরও পড়ুন: দেশে একদিনে করোনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ল ১৩৯৯ জন! একাধিক রাজ্যে ফের বাধ্যতামূলক হচ্ছে মাস্ক]
নথি বলছে, ভয়াবহ এই পরিস্থিতি কাজের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে সার্বিক ঢিলেমি ও অদূরদর্শিতারই পরিণতি। বেসরকারি সংস্থা ম্যাকিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, চাহিদা পূরণের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ কোটি নতুন চাকরির সুযোগ গড়ে তোলা এ দেশে লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত ছিল। এজন্য দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার অন্তত ৮ থেকে সাড়ে ৮ শতাংশ হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু বাস্তব সেই তুলনায় নেহাতই ম্লান। মহিলাদের বিয়ের ন্যূনতম বয়সের সীমা বাড়িয়ে তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে আগ্রহী করে তুলতে সচেষ্ট হয়েছে সরকার। দেশেই তরুণদের কর্মমুখী করে তুলতেও প্রয়াস অব্যাহত। কিন্তু সমীক্ষায় উঠে আসা তথ্য সাক্ষী, সেসবে চিড়ে এখনও তেমন ভিজছে কই! এদিকে এই ঘটনায় মোদি সরকারকে কটাক্ষ করে টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।