নবেন্দু ঘোষ, বসিরহাট: প্রকৃতির কী অদ্ভুত খেয়াল। সুন্দরবনের রায়মঙ্গল, ঝিলা, কালিন্দী, গোমতী ও বাকনা- এই পাঁচটি নদীর মোহনায় শ্রাবণের পূর্ণিমাতে জেগে ওঠে এক নদীচর। গত সাত বছর ধরে তার উপরেই পালিত হচ্ছে রাখিবন্ধন উৎসব। সেই সঙ্গে গঙ্গাদেবীর পুজো। এই দুই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবারও এই নদীর চরে কার্যত মানুষের ঢল নামতে দেখা গেল।
[ আরও পড়ুন: মৃত ব্যক্তির সই জাল করে জমি হাতানোর চেষ্টা, হাতেনাতে ধরা পড়ল প্রতারক ]
বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটে নাগাদ হেমনগর কোস্টাল থানার অন্তর্গত হেমনগর হরিবাড়ি রায়মঙ্গল নদীর চরে গিয়ে দেখা গেল নদীর পাড় ঘেঁষে একটি চর জেগে উঠেছে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ বোটে করে আসছেন। আর নদীর চরে আসা বিভিন্ন বয়সী মানুষ একে অপরকে রাখি পরিয়ে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল এখানে মূলত মঙ্গলচণ্ডী, সদ্দারপাড়া, কুমিরমারি, কালিতলা, হেমনগর, যোগেশগঞ্জ, সামসেরনগর এইসব এলাকা থেকে যুবক-যুবতী ও বিভিন্ন বয়সী মানুষ এসেছেন। সবাই একে অপরকে রাখি পরিয়ে রাখি পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানালেন। অনেক যুবকদের আবার দেখা গেল চরের পাশে নদীতে ফুটবল নিয়ে খেলা করতে। সবার মধ্যে যেন একটা বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। এই চরে অনুষ্ঠিত রাখিবন্ধন উৎসব ও গঙ্গা দেবীর পুজো উপলক্ষে আগত মৌ ঘোষ, চৈতালি দেবনাথ, শিলাদিত্য দে’রা বলেন, “২০১৩ সাল থেকে এই অনুষ্ঠানের সূচনা। তবে থেকেই আমরা এখানে আসি। রাখি বন্ধন উৎসব পালন করি। এ এক অসাধারণ অনুভুতি।”
এদিন এই চরে দেখা গেল রাখির দোকান খাবারের দোকানও বসেছে দুপুর তিনটে থেকে। এবং বেলা চারটে থেকে এখানে শুরু হয় গঙ্গাদেবীর পুজো। শেষ হয় পাঁচটা নাগাদ। এরপর প্রসাদ বিতরণ করা হয়। যদিও এদিন সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছিল, দুপুরের দিকে বৃষ্টি কিছুটা কমে। কিন্তু বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই দেখা গেল প্রায় কয়েকশো মানুষ ও কমপক্ষে ৩০-৪০টি নৌকা ও বোটে করে এলেন নদীর চরে। সন্ধে ছ’টার মধ্যে হেমনগর কোস্টাল থানার পুলিশের তরফ থেকে নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই চর থেকে সমস্ত মানুষকে সরিয়ে দেওয়া হয়। কেননা এই চর সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার দিকে আবারও নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। এরপর আবার শুরু হয় পরের বছর এই দিনটা উপভোগ করার অপেক্ষা।
এই গোটা অনুষ্ঠানের আয়োজক ‘আমরা ক’জন’ নামে একটি কমিটি। এই কমিটির সভাপতি সমীর মজুমদারের থেকে জানা গেল, মূলত রাখি পূর্ণিমার দিন এই নদীর চর অনেকটা জায়গা জুড়ে জেগে ওঠে। তাই এই জায়গাতেই রাখিবন্ধন উৎসব পালন করা শুরু করেন তাঁরা ২০১৩ সাল থেকে। যাতে আর পাঁচটা রাখিবন্ধন উৎসব এর থেকে এখানকার রাখিবন্ধন উৎসব সবার কাছে আকর্ষণীয়। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ মৎস্যজীবী নদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরে জীবন অতিবাহিত করে। তাই বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে রাখিবন্ধন উৎসবের পাশাপাশি এই নদীর চরে গঙ্গাদেবীর পুজোও করা হয়।
The post রাখি পূর্ণিমাতেই জেগে ওঠে নদীচর, একদিনের জন্য নতুন জায়গায় উৎসবে মাতেন মানুষ appeared first on Sangbad Pratidin.