ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: বিশ্বভারতী চত্বরের কমবেশি সকলেরই পরিচিত ছিলেন ফুচকা বিক্রেতা কপিল দেব শাহ। দুর্ঘটনায় হাত ভাঙায় বন্ধ ব্যবসা। সংসার চালাতে ফুচকার ব্যবসা শুরু করল কপিলের মেয়ে কবিতা। নাবালিকার এই সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সকলে।
কবিতাদের পাঁচ জনের সংসার। করোনার (Corona Virus) কারণে লকডাউনে দীর্ঘদিন ব্যবসা করতে পারেননি ফুচকা বিক্রেতা কপিল। ফলে অভাব দেখা দেয়। সংসার চালাতে শুরু করেন দুধের ব্যবসা। বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুধ দিতেন। কিন্তু তাতে মিটছিল না অভাব। এর মধ্যে লকডাউন উঠে গেলে ফের ফুচকার ব্যবসা শুরু করেন কপিল। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ও (Visva-Bharati University) খুলে যায়। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করতেই ছন্দপতন। দেড় মাস আগে বোলপুরের চৌরাস্তা এলাকায় একটি টোটোর সঙ্গে ধাক্কা লাগে কপিলের সাইকেলের। তাঁর হাতের হাড় ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে যায়। তখন প্রায় ৫০ হাজার টাকারও বেশি খরচ করে হাতে প্লেট বসাতে হয়। ধারদেনা করে সেই টাকা জোগাড় করে চিকিৎসা করানোয় আর্থিক সমস্যা প্রবল হয়।
[আরও পড়ুন: পোশাকের মধ্যে লুকনো ২৫ কেজি গাঁজা! লেনদেনের সময় বারুইপুরে গ্রেপ্তার তরুণী]
এদিকে ডাক্তার কপিলকে তিন মাস কোনও কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ফলে তিনি ফুচকা বিক্রি বন্ধ করতে বাধ্য হন। কী উপায়? সংসারের আর্থিক পরিস্থিতি বুঝে এরপর নিজেই ফুচকা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় কবিতা কুমারী। ছোট থেকে বাড়িতে ফুচকা তৈরি হতে ও বাবাকে তা বিক্রি করতে দেখেছে নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী। তাই বিষয়টা রপ্ত করতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। বর্তমানে প্রতিদিন বিকেলে বোলপুরের বাঁধগোরার সবুজপল্লি থেকে ফুচকার গাড়ি ঠেলে নিয়ে শান্তিনিকেতনের ফাস্ট গেটের সামনে যায় কবিতা। সন্ধে পর্যন্ত ফুচকা বিক্রি করে ফিরে যায় বাড়ি।
গত দেড় মাস ধরে ফুচকা বিক্রি করছে নবম শ্রেণির ছাত্রী কবিতা কুমারী। ফুচকা ব্যবসায় এখন বেশ পাকাপোক্তও হয়ে উঠেছে সে। কিন্তু এতকিছুর পরেও পড়াশোনা বন্ধ করেনি কবিতা। কবিতার কথায়, “করোনার কারণে এখন অনলাইনে পড়াশোনা চলছে। তাই আমিও অনলাইনেই পড়াশোনা করছি। মাঝেমধ্যে টিউশনে যাই। আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা। সেই কারণেই ফুচকা বিক্রির পাশাপাশি আমি যতটা পারছি পড়াশোনায় সময় দিচ্ছি।” কবিতার বাবা কপিল দেব শাহ বলেন, “মেয়েকে ফুচকা বিক্রি করতে হবে ভাবতে পারিনি। কিন্তু পরিবারের যা আর্থিক অবস্থা মেয়ে ফুচকা বিক্রি না করলে সংসারা চলবে না। তার উপর আমার চিকিৎসা।”