শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: পরপর দুই প্রিয় মানুষের হৃদস্পন্দন অকালে থমকে গিয়েছে। আর সেই কারণেই কার্যত বন্ধের মুখে রায়গঞ্জ শহরের প্রাণের ‘বড়বাসা’র পুজো। বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজোয় শামিল হওয়া নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ক্লাবের কর্তারা। চলতি বছরে আদৌ পুজো হবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
উত্তর দিনাজপুরের (Uttar Dinajpur) রায়গঞ্জ উকিলপাড়ার প্রাচীন ওই দুর্গাপূজা (Durga Puja 2021) কমিটির এক মহিলা-সহ দুই সক্রিয় সদস্য কয়েকদিন আগেই করোনার (Corona Virus) বলি হন। প্রিয় সদস্যদের মৃত্যুর শোকের ছায়া যেন দুর্গা দালানেও। কংক্রিট মণ্ডপের দেওয়ালে প্রয়াত দুই সদস্যের প্রতিকৃতি ফুলমালায় ঢাকা পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মণ্ডপে নেই আসন্ন শারদোৎসবের আমেজ। সন্ধেতেই রাতের নিস্তব্ধতা মন্দির চত্বরে। অথচ গত বছরও পুজোর আগের এক মাস সদস্যদের ভিড়ে জমজমাট থাকত এলাকা।
[আরও পড়ুন:Durga Puja 2021: প্রথা মেনে চারহাতের দুর্গা পূজিতা হন কালনার চৌধুরী পরিবারে, জানুন পুজোর ইতিকথা ]
প্রায় ৯২ বছর আগের শুরু হয়েছিল উকিলপাড়ার ‘বড়বাসা’র বাড়ির সাবেকি পুজো। আর্থিক সংকটের কারণে ৬৮ বছর আগে পুজোর দায়িত্ব নেয় ক্লাব। আয়োজকের নাম বদলে হয় ‘লিচুতলা স্পোর্টস ক্লাব এন্ড লাইব্রেরি’। পরিবারের অন্দর ছেড়ে বাড়ির সামনের জায়গায় অস্থায়ী মণ্ডপে শুরু হয় পুজো। কিন্তু পুজোর আচার-উপাচার আজও বদলায়নি। তবে এক দশক ধরে কংক্রিটের মণ্ডপে পূজিতা হচ্ছেন একচালার দেবীদুর্গা। সারাবছর অন্নভোগে চলে দেবীবন্দনা। কিন্তু এত বছর পরও বিস্মৃত হয়নি ‘বড়বাসা’র দুর্গাপুজো। সেই নামেই শহরবাসীর কাছে পরিচিত লিচুতলা দুর্গাপুজো।
কিন্তু মাত্র সাড়ে চার মাস আগে সঞ্জীব ভট্টাচার্য এবং দেড় মাস আগে সীমা ঘোষের মৃত্যু যেন উদ্যোক্তাদের সব কিছু শক্তি কেড়ে নিয়েছে। পুজোর আনন্দে মেতে ওঠার মতো মনোবলই নেই কারও। ওই পুজো কমিটি’র অন্যতম কর্তা রঞ্জন বোস বলেন, “পুজোর আয়োজনের ইচ্ছা শক্তিটাই যেন হারিয়ে গিয়েছে। এবছরের করোনায় পরপর দুইজন উদ্যোমী সদস্যকে সারাজীবনের জন্য হারিয়েছি আমরা। দেবীদুর্গার সাজসজ্জা থেকে শুরু করে অর্থ সংগ্রহ, পুজোর নানা কাজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করতেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের ছাড়া এবার দুর্গাপুজো! মন মানছে না কিছুতেই।” প্রয়াত প্রিয় দুই সদস্য সম্বন্ধে কথাগুলো বলতে বলতে হঠাৎ চোখের কোল বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ল রঞ্জনবাবুর মতো অন্যান্য সদস্যদের চোখ থেকে। ক্লাবের সম্পাদক তাপস চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, “পুজোর আয়োজন হয়ত হবে। কিন্তু কীভাবে হবে জানা নেই। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সীমাদি পুজোতে নেই, এটা ভাবতে পারছি না। অনেক বাধ্য যন্ত্র বাজিয়ে পুজোর দিনগুলো মাতিয়ে রাখত। কিন্তু আর এখনও শুনসান।”