সম্যক খান, মেদিনীপুর: ওদের কারও নাম মুশারফ তো কারও নাম সামাদ। কেউ বা আবার শ্যামল তো কেউ হারুন। কিন্তু ওদের একটাই পরিচয় যে ওঁরা সবাই পুরসভার অস্থায়ী শ্রমিক কিংবা স্বেচ্ছাসেবক। কিন্তু দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের সঙ্গী ওরাও। একপ্রকার বলতে গেলে বিসর্জনের পুরো কর্মকাণ্ডটাই ওঁরা তুলে নিয়েছিলেন নিজেদের কাঁধে। নামে কি বা যায় আসে। উৎসব উদযাপনের আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন সকলে মিলে।
এই সম্প্রীতির নজির দেখা গিয়েছে মেদিনীপুরে। এনিয়ে পুরপ্রধান সৌমেন খান বলেন, মেদিনীপুর শহরে কাঁসাই নদীর দুটি ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল পুরসভার তরফ থেকে। সেখানে বিসর্জন থেকে শুরু করে নদী থেকে কাঠামো তোলা ও পরিষ্কারের পুরো দায়িত্বটাই কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। তাঁর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শে অনুপ্রাণিত তারা। ধর্মের নামে মানুষের মধ্যে যারা বিভেদ ঘটাতে চায় তাদের মুখের উপর জবাব দিতে পেরেছে মেদিনীপুর। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছেন তারা।"
জানা গিয়েছে, জেলাশহর মেদিনীপুরে এবছর প্রায় ১৮০ টি দুর্গাপুজা হয়েছে। সেই পুজো বিসর্জনের জন্য প্রতিবারের মতো এবারও মেদিনীপুর শহরের গান্ধীঘাট ও ডিএভি ঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা করেছিল পুরসভা। মেদিনীপুর শহর থেকে শুরু করে আশেপাশের এলাকার নিরঞ্জনও হয় এখানে। এবছর দুটি ঘাটে প্রায় দুশো প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। পুরসভার নিযুক্ত প্রায় ৭০ জন শ্রমিক ও স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেছেন এখানে। যাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। প্রতিমা নিরঞ্জনে সাহায্য করা থেকে শুরু করে ঘাট পরিষ্কার রাখার গুরুদায়িত্ব বরাবরই তারা নিজেদের কাঁধে তুলে নেন। এবারও তার অন্যথা হয়নি।
এনিয়ে সকলের নেতৃত্বে থাকা সেক মতিন বলেন, "বরাবরই তারা এই কাজ করে থাকেন। তাদের ভালো লাগে। আলাদা এক অনুভূতি তৈরি হয়। মেদিনীপুর শহর শান্তির শহর। এখানে আমরা সকলেই মিলেমিশে থাকি। আগামী দিনেও যেন সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে যেতে পারি সেই কামনা করি সকলের কাছে।" তবে এবার বিসর্জনও পেয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। সুন্দরভাবে পাকা ঘাট তৈরি করে দেয় মেদিনীপুর পুরসভা। রাখা হয় দুটি বিশালাকার হাইড্রা তথা ক্রেন। ঠাকুর নিয়ে আর জলে নামতে হচ্ছে না পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের। পাড়েই সমস্ত নিয়মকানুন পালন করা হচ্ছে। তার পর তা বেঁধে তুলে দেওয়া হচ্ছে ক্রেনে। সেই ক্রেনে করেই জলে ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদেরও। তারা নজরদারি চালাচ্ছেন।