মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: টাকা দেওয়ার নামে ডেকে ভালোমন্দ খাইয়ে স্বামীকে খুন! দেহ ত্রিপলে জড়িয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল জলে। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হল না। অবশেষে পুলিশের জালে মৃতের স্ত্রী, মামাশ্বশুর, মামীশাশুড়ি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হাওড়ার (Howrah) জয়পুর থানার খালনা এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম গণেশ দাস। তাঁর স্ত্রী নবনীতা। গণেশের সঙ্গে তাঁর পরিচয় বছর তিনেকের। নবনীতার প্রথম বিয়ে হয়েছিল কলকাতায়। সেখান থেকেই সুদের কারবারি গণেশের সঙ্গে যোগাযোগ। ২০১৮ সালে প্রথম স্বামীর সঙ্গে সমস্যা হতে শুরু করে নবনীতার। স্বাভাবিকভাবেই যোগাযোগ বাড়ে গণেশের সঙ্গে। ২০১৯ সালে নবনীতা গণেশের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা ঋণ নেন। পুলিশ জানিয়েছে, এর পর তাঁরা মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের পর টাকা নিয়ে গণেশের সঙ্গে শুরু হয় অশান্তি। অভিযোগ, নবনীতা তাঁর বাড়ি উলুবেড়িয়ার রাজাপুর থানা এলাকার বড়গ্রামে চলে আসেন। এদিকে মাঝে ২০২১ সালে ফের নবনীতা ২ লক্ষ টাকা এবং তাঁর মামা সুকল্যান মালিক এক লক্ষ টাকা ঋণ নেন গণেশের কাছ থেকে। দশ শতাংশ হারে সুদের টাকা মিটিয়ে দিচ্ছিল তাঁরা। তবে ঋণের টাকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সুদের টাকাও বাড়ছিল। এদিকে সব সময় তারা তা দিতেও পারছিল না। এ নিয়ে ফের সমস্যা তৈরি হয়। টাকা না দিতে পেরে নবনীতা গণেশকে জমি দেবে বলে আশ্বাস দেয়। কিন্তু তাও গণেশ পাননি। এর পর গণেশ সুদ-সহ টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে নবনীতা ও তার মামাকে।
[আরও পড়ুন: ‘সাত দফায় সাত অঙ্গ ভাঙব বিজেপির’, দার্জিলিংয়ে হুঁশিয়ারি অভিষেকের]
অভিযোগ, তাঁরা সুদ এবং আসল কিছুই দিচ্ছিল না। এদিকে ঢাকা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে ২০২২ সালে গণেশ উলুবেড়িয়ার রাজাপুর থানায় চিটিং-এর একটি অভিযোগ দায়ের করেন নবনীতা ও তার মামার বিরুদ্ধে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তার পরই গণেশকে খুনের পরিকল্পনা করেন নবনীতারা। ২০২৩ সালেক ২৩ আগষ্ট নবনীতা স্বামী গণেশকে জয়পুর থানার দক্ষিণ খালনায় মামার বাড়িতে ডাকেন মীমাংসার জন্য। সেইমতো গণেশ যান। তার পর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন গণেশ। এদিকে গণেশ বাড়ি না ফিরে আসায় পরিবারের লোকেরা খোঁজখবর করে। কোথাও গণেশকে না পেয়ে ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গণেশের পরিবারের লোকেরা জয়পুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এর পরও গণেশের কোনও খোঁজ না পাওয়া যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে অপহরণের মামলা হয়। গত শুক্রবার নবনীতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার তাঁর মামা ও মামীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা গিয়েছে, মামার ডেকে ভালোমন্দ খাওয়ানো হয় গণেশকে। সন্ধেয় শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তাঁকে। তার পর দুদিন পাশের খড়িবনে মৃতদেহ রেখে দিয়েছিল অভিযুক্ত স্ত্রী ও মামাশ্বশুর। দুদিন পর রাতের অন্ধকারে মৃতদেহ ত্রিপলে বেঁধে জলে ফেলে দেয়। এখানেই শেষ নয়, দেহ যাতে ভেসে না ওঠে সেজন্য মৃতদেহের শরীরে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল পাথর। তবে এসবের আগে কোন জায়গায় ফেললে সুবিধা হয় সেটা রেইকি করে গিয়েছিল অভিযুক্তরা। দেহ ফেলার পর মাঝে মাঝেই দেখে যেতেন দেহ ভেসে উঠছে কিনা। পরিকল্পনা ছিল জল কমলে হাড়গোড় উদ্ধার করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়ার যাতে কেউ না বিন্দুমাত্র টের পায়। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।