অর্ণব আইচ: প্রথমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে স্কুল ছাত্রীকে ‘অপহরণ’। তারপর মেয়েকে পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে হাজার কুড়ি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ছক কষে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের এক ধাবায় নিয়ে গিয়ে কিশোরীকে লুকিয়ে রেখেছিল এক তরুণ। দম্পতির ছদ্মবেশে গিয়ে বসিরহাটের ওই ধাবায় হানা দেন নিউ আলিপুর থানার পুলিশকর্মীরা। সেখান থেকে উদ্ধার হয় নবম শ্রেণির ছাত্রী। অভিযুক্ত তরুণ সুজয় হাজরাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। রবিবার আদালতে তোলা হলে তাকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ জানিয়েছে, হোয়াটস অ্যাপের ডিপিতে এক সুদর্শন তরুণের ছবি দেখেই প্রেমে পড়ে যায় দক্ষিণ কলকাতার নিউ আলিপুরের এম টি লেনের বাসিন্দা ওই কিশোরী। প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই কিশোরীকে অপহরণের ছক কষে ওই তরুণ। এর মধ্যে তাঁরা দেখাও করে। তখনই কিশোরী বুঝতে পারে, ডিপির ছবিটি ভুয়ো। তবুও তরুণের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যায় সে। গত শুক্রবার হঠাৎই কিশোরী বেপাত্তা হয়ে যায়। এরপর নিউ আলিপুর থানার পুলিশ অপহরণের তদন্ত শুরু করে। কিশোরীর শেষ টাওয়ার মেলে বসিরহাটে। নিউ আলিপুর থানার ওসি অমিতশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে পুলিশের টিম বসিরহাটে যায়। তরুণের শেষ টাওয়ার মেলে হাওড়ায়। পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, হাওড়ায় দেখা করে দু’জন চলে গিয়েছে বসিরহাটে।
[আরও পড়ুন: ছেলে উচ্চশিক্ষিত হয়েও পেশায় ডেলিভারি বয়, অবসাদে আত্মঘাতী হুগলির বৃদ্ধ দম্পতি]
এর মধ্যেই কিশোরীর কাকাকে একজন ফোন করে বলে, “আপনাদের বাড়ির মেয়ে কি হারিয়ে গিয়েছে? আমরা খুঁজে দেব। কিন্তু ভাল টাকা দিতে হবে।” এই তথ্য পেয়ে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ফোনের টাওয়ার বসিরহাটে। কিন্তু পুলিশের টিম তদন্ত করে দেখে, ফোনের মালিক বয়স্ক এক ব্যক্তি। তিনি জানান, অজ্ঞাতপরিচয় এক তরুণ নিজের ফোন হারিয়ে গিয়েছে বলে একটি কল করার জন্য তাঁর ফোনটি চায়। এবার পুলিশ নিঃসন্দেহ হয়ে কিশোরীর ছবি নিয়ে বসিরহাটের প্রতে্যকটি হোটেল ও ধাবায় তল্লাশি চালায়। একটি ধাবার মালিক জানান, ওই কিশোরীর ‘স্বামী’ ধাবার একটি ঘর ভাড়া নিয়েছে। দম্পতি সেজে এক পুলিশকর্মী ও এক মহিলা পুলিশকর্মী ওই ঘরটিতে যান। ওই কিশোরীই দরজা খোলে। জানায়, তার নতুন বিয়ে হয়েছে। ‘স্বামী’ গিয়েছে বাজারে। গল্প করার ছলে ফাঁদ পাতে ছদ্মবেশী পুলিশ। ওই তরুণ ধাবায় আসামাত্রই তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
জেরার মুখে ধৃত সুজয় জানিয়েছে, এই প্রেম আসলে প্রতারণার ফাঁদ। বিয়ে করে সংসার পাতার আগেই বাড়ির লোকেদের ডেকে নিয়ে এসে প্রথমে মোটা টাকা হাতিয়ে নেয় সে ও তার সঙ্গীরা। এরপর সেই ‘অপহৃত’ তরুণী বা কিশোরীকে তুলে দেয় পরিবারের লোকেদের হাতে। মেয়েকে পাওয়ার পর তাঁরাও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান না। এই ক্ষেত্রে নিউ আলিপুরের ওই পরিবারটির কাছ থেকেও টাকা হাতানোর ছক কষেছিল তাঁরা। ধৃতকে জেরা করে এই ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।