ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বড় টুর্নামেন্টের আগের রাতে মাঠ ছেড়ে কেউ যে দূরে থাকতে পারে না, সেটা বুঝিয়ে দিল কাঁথির প্রভাতকুমার কলেজ মাঠ। রাত পেরিয়ে সকাল। পূর্ব মেদিনীপুরের দুই সাংগঠনিক জেলার নেতা-কর্মীদের পায়ে পায়ে ধুলো উড়ছে। মঞ্চ দেখেই চোখ পড়ছে মাঠে। সকলের আফসোস, আজকের সভার জন্য মাঠ ছোট পড়বে। শনিবার এই মাঠেই বিপুল জমায়েতের মধ্যে সভা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee)।
সভার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দেখতে শুক্রবার দিনভর দফায় দফায় মাঠে যায় জেলা নেতৃত্ব। ছিলেন কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তরুণ মাইতি, তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র, মন্ত্রী অখিল গিরি, হলদিয়া ডেভলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় কর, কাঁথি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরিরা। বিকেলে পৌঁছন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। সভার প্রস্তুতির চূড়ান্ত রূপ দেখে নেওয়ার ঘণ্টাকয়েকের সেই পর্বের মধ্যেই ধরা পড়ল জেলা নেতৃত্বের অটুট চেহারা।
[আরও পড়ুন: ‘বাঘিনী’ মমতা, বিজেপি ‘খেঁকশিয়াল’, অনুব্রতহীন বীরভূমে হুঙ্কার মহুয়ার]
অভিষেকের সভাকে কেন্দ্র করে যা একেবারে জমাট আকার নিয়েছে। কুণাল আজকের সভা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কাঁথি একটি ঐতিহ্যশালী শহর। তৃণমূলের প্রতীকে জেতা সাংসদ থেকে শুরু করে চারিদিকে দীর্ঘদিনের তৃণমূল পরিবার। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা নিয়ে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। সর্বস্তরের তৃণমূল কর্মীরা আসবেন।’’ অভিষেকের সভা ঘিরে একেবারে সাজ-সাজ রব। প্রভাতকুমার কলেজ মাঠ কাঁথি শহরের সবথেকে বড় মাঠ। এর আগে অভিষেকের সভা হয়েছিল কাছের ধানখেত লাগোয়া মাঠে। সে মাঠ এই নবান্নে ধানে ভরে উঠেছে। সেই কারণেই এই মাঠ বেছে নেওয়া। যা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ি থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে। শুভেন্দু মামলা করেছিলেন তাঁর বাড়ির সামনে এমন সভা তাঁর পরিবারকে বিব্রত করার জন্য। কোর্ট সেসব খারিজ করে বলে দিয়েছে, সভা করার অধিকার সকলের আছে।
অখিল গিরি, উত্তম বারিক, তরুণ মাইতিরা যা নিয়ে বলতে গিয়ে বললেন, ‘‘এটা কারও গড় নয়। কারও বাড়ির সামনে সভা হতেই পারে। তার সঙ্গে তাঁকে বা তাঁদের পরিবারকে বিব্রত করার কী আছে?’’ সৌমেন মহাপাত্রর কথায়, ‘‘এই মাঠ ছোট পড়বে বলে আমরা ধানখেত মাঠে সভা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা এখন সম্ভব নয়। কারণ সে মাঠ ফসলে ভরা।’’ সুপ্রকাশ বলেছেন, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী তো নন্দীগ্রামের বিধায়ক। কোনও জায়গার লোক বলে যদি ধরা হয়, শুভেন্দুবাবু তো তবে সেখানকার লোক। সভা তো হচ্ছে কাঁথিতে।’’
এর মধ্যেই প্রশ্ন ওঠে কাঁথির অধিকারী বাড়ির দুই সাংসদ শিশির অধিকারী আর দিব্যেন্দু অধিকারীকে নিয়ে। তাঁরা কি এই সভায় আসবেন? প্রশ্ন শুনেই কুণাল বলেন, ‘‘এটা তো বিয়েবাড়ি নয়। কাউকে আমন্ত্রণ জানানোর নেই। তৃণমূলের প্রতীকে ভোট চাওয়ার সময় লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাতজোড়, আর এখন আমন্ত্রণ? তৃণমূলের সভা। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সভা। এখানে তৃণমূল প্রতীকে জেতা যে যেখানে আছেন, তাঁদের গায়ে যদি কৃতজ্ঞতার রক্ত থাকে, তাঁদের উচিত এই মহাযজ্ঞে শামিল হওয়া।” কুণালকে কাছে পেয়ে সন্ধেয় পাশের পার্টি অফিসে নিয়ে যান তৃণমূল কর্মীরা। দলের মহিলা কর্মীরাও আসেন। চা-চক্র বসে। কুণাল বলে দেন, এরকম বৈঠক আরও হবে। তিনিও সুযোগ পেলেই আসবেন। মানুষকে বিভাজনের বিষ আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ছবিটা পরিষ্কার করে বোঝাতে হবে। সেই সঙ্গে বলেন, ‘‘বিশ্বাসঘাতকতা একটা পরিবার দেখিয়ে দিয়েছে। সেদিকে যেন সতর্ক নজর থাকে।’’