স্টাফ রিপোর্টার: টিনের ড্রামের উপর ও নিচের অংশ কেটে তা পর পর বসিয়ে দিত প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিম। সেই টিনের মধ্যেই সাদা বালি পুরে, তার সঙ্গে সিমেন্ট আর পাথরকুচি দিয়ে বাড়ির থাম ঢালাই করেছিল ওই প্রোমোটার ও তার লোকেরা। গার্ডেনরিচের আজাহার মোল্লাবাগানে ভেঙে পড়া পাঁচতলা বাড়িটির থাম ও কংক্রিটের স্ল্যাব তৈরির পদ্ধতি ও নির্মাণের বস্তুর ভুল মিশ্রণের কারণেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তের পর ধারণা পুলিশের।
এই বালি, সিমেন্টও নিম্নমানের বলে পুলিশের অভিযোগ। এবার সেই নির্মাণের মশলা সরবরাহের পিছনে থাকা সিন্ডিকেটের মাথাদের সন্ধান চালাচ্ছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে ফিরোজ নামে তার এক সঙ্গীর নাম, যে এই জিনিসগুলি সরবরাহ করত। যদিও লালবাজারের গোয়েন্দাদের মতে, বিশেষ কারও কাছ থেকে নয়, গার্ডেনরিচের একাধিক সিন্ডিকেটের কাছ থেকে সে নিম্নমানের নির্মাণের মশলা কিনত।
[আরও পড়ুন: গার্ডেনরিচ কাণ্ডে গ্রেপ্তার আরও ১, এবার পুলিশের জালে জমির মালিক]
খুনে অভিযুক্ত প্রোমোটার মহম্মদ ওয়াসিমকে জেরা করে এবার এই সিন্ডিকেটের মাথাদের নাম জানার চেষ্টা করছে। যদিও প্রাথমিকভাবে জেরার মুখে ওয়াসিম গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, সে নিচের তলাগুলিতে দেওয়াল গাঁথনির বদলে পাঁচতলায় দেওয়াল গাঁথনির কাজ শুরু করেছিল। এটাই তার ‘ভুল’। এই কারণেই বাড়িটির নিচের তলা ও থাম ভার বহন করতে পারেনি। তাই রবিবার গভীর রাতে ভেঙে পড়ে পাঁচতলা বাড়িটি। যদিও পুলিশের অভিমত, কোনও নির্মীয়মাণ বাড়ির থাম পর্যাপ্ত সংখ্যক ও যথেষ্ট শক্তপোক্ত থাকলে তা হয়তো ভার সহ্য করতে পারত। কী কারণে বাড়ির থাম একেবারেই শক্তপোক্ত ছিল না, পুলিশ তা জানার চেষ্টা করছে।
মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে ফরেনসিক ও নির্মাণ বিশেষজ্ঞরা যান। বাড়ির থামের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও তার মান তাঁরা খতিয়ে দেখেন। এ ছাড়াও ধ্বংসস্তূপ ঘেঁটে তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠাচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে নির্মাণের ঠিকাদার ও মিস্ত্রিদের সন্ধান চালানো হচ্ছে। কারণ, মিস্ত্রিদের জেরা করলে মশলা মিশ্রণের ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য পাবেন গোয়েন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে, গার্ডেনরিচ অঞ্চলে (Garden Reach) মহম্মদ ওয়াসিম প্রায় এক ডজন বাড়ি তৈরি করেছে। সেগুলির মানও গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখতে চান। এলাকারই এক ব্যবসায়ী শেরু নিজামির সঙ্গে হাত মিলিয়ে যে ওয়াসিম প্রোমোটিংয়ের কাজ করত, তা সে পুলিশকে জানিয়েছে। যদিও শেরু এখনও ধ্বংসস্তূপের তলায় পড়ে নিখোঁজ। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, কয়েকটি বিষয়ের উপর পুলিশ গুরুত্ব দিচ্ছে। বাড়ির প্ল্যানিং বা কোনও নকশা ওয়াসিম কাছে ছিল কি না, কেনই বা বাড়ির সামনে পর্যাপ্ত জায়গা ছাড়া হয়নি, জলাশয় বুজিয়ে নির্মাণ হয়েছিল কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।