সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আফগানিস্তান (Afghanistan) তালিবানদের (Taliban) দখলে চলে যাওয়ার পর থেকেই গোটা বিশ্ব সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত হয়েছিল সেখানকার মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তাদের রাজত্বের প্রথম পর্বে যেমনটা দেখা গিয়েছিল, ঠিক তেমন ভাবেই একবার ফের বিপন্ন হবে সেদেশের মেয়েরা- এমন ধারণা ক্রমেই পোক্ত হতে থাকে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে তালিবান মুখপাত্র জানিয়ে দেয়, মেয়েদের সব অধিকার রক্ষা করা হবে এই নয়া তালিবান জমানায়। অথচ সত্যিটা যে কত আলাদা তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন সাংবাদিক শবনম দওরান।
আফগান সংবাদমাধ্যম RTA Pashto-র সাংবাদিক শবনম। তালিবান আফগানভূম কবজায় আনার পরের দিন সকালে অফিসে গিয়েই তাঁকে শুনতে হয়েছিল আর অফিসে আসতে হবে না। কর্মজীবনে এখানেই দাঁড়ি। সটান বলা হয়েছিল, ”তুমি মেয়ে। যাও নিজের বাড়িতে ফিরে যাও এবার।” শবনম অবাক হয়ে দেখেছিলেন তাঁর পুরুষ সহকর্মীরা দিব্যি অফিসে ঢুকতে পারছেন। কিন্তু তিনি পরিচয়পত্র দেখিয়েও আর প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন না।
[আরও পড়ুন: কাল হল নেপথ্যের গুজবই, কাবুলের বিমান থেকে খসে পড়া দুই ভাইয়ের কাহিনি বড়ই বেদনাদায়ক]
মুহূর্তেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল সব। বদলে গিয়েছে দিনকাল। ফের অন্ধকার এক চৌখুপির মধ্যে ঢুকে পড়েছে নারী স্বাধীনতা। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে শবনম জানিয়েছেন, ”আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন আমি আর কাজ করতে পারব না? আমাকে বলা হয়েছিল আইন বদলে গিয়েছে। আর আরটিএ-তে মেয়েদের কোনও জায়গা হবে না। যখন ওরা ঘোষণা করেছিল মেয়েদের কাজ করতে দেওয়া হবে, আমি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম আনন্দে। কিন্তু পরদিনই বাস্তবটা বুঝতে পারলাম। আমি আমার পরিচয়পত্রও দেখালাম। কিন্তু ওরা সটান বলে দিল বাড়ি যাও।”
অথচ ক্ষমতায় আসার পরে তালিবান মুখপাত্রের যে সাক্ষাৎকারটি টিভিতে দেখানো হয়েছিল, সেটি নিয়েছিলেন একজন মহিলা সাংবাদিকই। কিন্তু পরে বোঝা যায়, সবটাই মুখোশ। তালিবান আছে তালিবানেই। এই মুহূর্তে তাই দিশেহারা শবনম ও তাঁর সঙ্গী মহিলা সাংবাদিকরা। যদিও বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে এখনও তেমন ফতোয়া জারি করা হয়নি। কিন্তু সরকারি সমস্ত সংবাদমাধ্যমের মহিলা সাংবাদিকদেরই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
[আরও পডুন: ভাঁড়ারে বারুদ আছে, ভাত নেই! তালিবানি রাজত্বে অনাহারের মুখে প্রায় দেড় কোটি আফগান]
শবনমের গলায় ঝরে পড়ছে অসহায় আর্তি, ”আমি আর এখানে কাজ করতে পারব না! এই মুহূর্তে আফগানিস্তানে থাকাই কঠিন হয়ে পড়ছে। কারও থেকে সমর্থন পেলে আমি দেশ ছাড়তে রাজি।” শবনমের মনের মধ্যে জাঁকিয়ে বসছে ভয়। নিজের জীবন তো বটেই, তার থেকেও বেশি ভয় পরিবারের সুরক্ষার। তালিবান যে বড়ই নির্দয়। এক কালো অধ্যায়ের সূচনায় তাই বিষণ্ণতা আর আতঙ্ককে সঙ্গী করেই দিন কাটছে শবনমদের।