বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: কয়েক দশক পর ‘গড ফাদার’-এর নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে এবার পাহাড়বাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিল্লিতে প্রতিনিধি পাঠানোর অপেক্ষায়।
আশির দশক থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পাহাড়ের ভাগ্য বিধাতা কখনও ছিলেন সুবাস ঘিসিং, আবার কখনও বিমল গুরুং। তারা যে দলকে ভোট দিতে হুইপ জারি করতেন পাহাড়বাসী সেই দলকে চোখ বন্ধ করে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ২০২২ সালে প্রথমে পুরসভা এবং পরে জিটিএ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের হাত ধরে ‘গড ফাদার’ রাজের অবসান ঘটে। পাহাড়বাসী দীর্ঘদিন বাদে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনের সুযোগ পেয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়। এবার লোকসভা নির্বাচনেও পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থনের সুযোগ পেয়ে খুশি। যেমন, দার্জিলিং ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ লামা বলেন, “পাহাড়বাসী নিজের বিচার বুদ্ধিতে লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিল। এবার নিজের মতো করে ভোট দেবে। এটা বিরাট প্রাপ্তি।”
[আরও পড়ুন: গাড়িতে রক্তের দাগই ধরিয়ে দিল ‘খুনি’কে! ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিউ টাউনে ট্রলি ব্যাগে দেহ রহস্যের কিনারা]
কেন এমনটা বলবেন না? ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে বিধ্বংসী আন্দোলনের সুবাদে পাহাড়ের মুকুটহীন সম্রাট হয়ে ওঠেন সুবাস ঘিসিং। কার্যত তখন থেকে সুবাস ঘিসিং যে দলকে সমর্থন করেছেন তারাই জয়লাভ করেছে। অর্থাৎ পাহাড়ের আমজনতা তাকেই ভোট দিতেন। নিজেদের পছন্দ-অপছন্দের কোনও মূল্য ছিল না। এমন একনায়কতন্ত্র দেখে নির্বাচন এলে ঘিসিংয়ের আশীর্বাদের জন্য প্রতিটি দল মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে। বিশেষত লোকসভা নির্বাচনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৯ সালে ঘিসিংয়ের সমর্থনে জয়লাভ করেন ইন্দ্রজিৎ খুল্লার। এর পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান ঘিসিং। জয়লাভ করে সিপিএম। ২০০৪ সালে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে জয় এনে দেন ঘিসিং। এরপর ধীরে ধীরে বিমল গুরুং হয়ে ওঠেন পাহাড়ের শেষ কথা। তার সমর্থনে বিজেপি তিন দফায় জয় পায় দার্জিলিং লোকসভা আসনে।
২০১৭ সালে গুরুং দিল্লিতে আত্মগোপন করলে পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণ পালটাতে শুরু করে। উত্থান ঘটে অজয় এডওয়ার্ড, অনীত থাপাদের। পতন হয় গুরুং জমানার। পাহাড়ের সমাজকর্মী কিশোর প্রধান বলেন, “এটা ভেবে ভালো লাগে পাহাড়ে এখন কোনও গড ফাদার নেই। সব রাজনৈতিক দল নিজেদের মতো কাজ করছে। পাহাড় এখন মুক্ত। তাই প্রত্যেকে নিজেদের ভাবনা থেকে ভোট দেবেন।” প্রায় একই বক্তব্য চা শ্রমিক মীনা কুমারী রাইয়ের। তিনি বলেন, “ভোট যে উৎসব হতে পারে সেটা এতদিন বুঝতে পারিনি। এবারই প্রথম টের পাচ্ছি।”