shono
Advertisement

মেজিয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণে নষ্ট কৃষিজমি, মমতার নির্দেশে ৮ কোটি ক্ষতিপূরণ চাষিদের

১০০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফ্লাই অ্যাশ।
Posted: 12:25 PM Mar 27, 2023Updated: 12:25 PM Mar 27, 2023

অভিরূপ দাস: হেলিকপ্টারে করে যাচ্ছিলেন বাঁকুড়ার উপর দিয়ে। নিচের জমি দেখেই থ বনে যান মুখ‌্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায় (Mamata Banerjee)। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার সাদা ছাইয়ের আস্তরণে ঢাকা। বুঝতে তাঁর বেশি সময় লাগেনি। বাঁকুড়ার মেজিয়া তাপবিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের (Mejia Thermal Power Station) ফ্লাই অ‌্যাশে চাষিদের দুরবস্থা টের পেয়ে স্তম্ভিত মুখ‌্যমন্ত্রী দ্রুত যোগাযোগ করেন পরিবেশ দপ্তরের সঙ্গে। আর তার জেরেই চাষিদের ৭.৯২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ‌্য হল মেজিয়া তাপবিদ‌্যুৎ কেন্দ্র।

Advertisement

তবে লড়াই সহজ ছিল না। পরিবেশমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া (Manas Bhunia) জানিয়েছেন, ২০১৭ থেকে ২০২৩– টানা ছ’বছর লড়াই করেছেন পরিবেশ দপ্তরের আইনজীবী এবং গবেষকরা। মুখ‌্যমন্ত্রীকে অকুণ্ঠ ধন‌্যবাদ জানিয়ে মানস ভুঁইয়ার কথায়, ‘‘মুখ‌্যমন্ত্রী কতটা সহানুভূতিশীল, তা আরও একবার প্রমাণিত হল। চাষের জমির হাল খারাপ হলে চাষিরাও যে দুরাবস্থায় পড়বেন, তা বুঝতে পেরেই ব‌্যবস্থা গ্রহণ করেন তিনি।’’

[আরও পড়ুন: ঠান্ডা পানীয় ভেবে বিষ পান করে মৃত্যু স্কুলছাত্রের, অসুস্থ আরও ৪]

বাঁকুড়া দুর্লভপুরের কাছেই দামোদর ভ‌্যালি কর্পোরেশনের কয়লাচালিত তাপবিদ‌্যুৎ কেন্দ্র মেজিয়া। তাপবিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পোড়া ছাইকেই বলা হয় ফ্ল‌্যাই অ‌্যাশ। কতটা ক্ষতিকর তা? রাজ‌্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম‌্যান কল‌্যাণ রুদ্র জানিয়েছেন, অত‌্যন্ত ক্ষতিকর এই ফ্লাই অ‌্যাশ। তাপবিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা পুড়ে তৈরি হয় তা। হালকা এ ছাই বাতাসে ভেসে উড়ে যেতে পারে কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত। দেখা গিয়েছে, তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশে ১০০ কিলোমিটার এলাকার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এই ফ্লাই অ‌্যাশ। যেমনটা হয়েছিল মেজিয়ায়। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল জমির উর্বরতা।

মুখ‌্যমন্ত্রী বুঝতে পারেন, ধানচাষ তো হবেই না। অন‌্য কোনও গাছও লাগানো যাবে না এই এলাকায়। মুখ‌্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েই গ্রিন ট্রাইবুনালে মামলা করে পরিবেশ দপ্তর। দপ্তরের সচিব রোশনি সেন জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ২০ কোটি টাকা জমা দিতে বলা হয় জেলাশাসকের কাছে। ছ’বছর ধরে দু’পক্ষের বয়ান শোনে পরিবেশ আদালত। সম্প্রতি ১৪ ফেব্রুয়ারি ন‌্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল নির্দেশ দিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ৭.৯২ কোটি টাকা দিতে হবে। শুধু তাই নয়, তৈরি করতে হবে একটি বিশেষ কমিটি। সে কমিটি মেজিয়া তাপবিদ‌্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত জমি খতিয়ে দেখবে। পরামর্শ দেবে, কীভাবে তা পুনরুদ্ধার করা যায়। সে কাজটাও করতে হবে মেজিয়া তাপবিদ‌্যুৎ প্রকল্পের কর্তাব‌্যক্তিদের।

[আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে বাম-কংগ্রেসকে সমর্থন! অঘোষিত ‘জোট’বার্তা বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার]

শুধু তাই নয়, মেজিয়া তাপবিদ‌্যুৎ প্রকল্পকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী যদি অতিরিক্ত টাকা লাগে তাও দিতে হবে সত্বর। পরিবেশ দপ্তরের সচিব রোশনি সেন জানিয়েছেন, মামলা এখনও শেষ হয়নি। পরিবেশ আদালত জানিয়েছে, শুধু জমি নয়, শারীরিক ক্ষতি হলেও তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। চিকিৎসকরা বলছেন, ফ্লাই অ‌্যাশের মাধ‌্যমে শারীরিক ক্ষতিও হয় মারাত্মক। এই ছাইতে সীসা, আর্সেনিক, পারদ, ক্যাডমিয়াম এবং ইউরেনিয়াম থাকে। পরিবেশবিদদের কথায়, ‘‘ফ্লাই অ্যাশ এবং কয়লা অ্যাশের অন্যান্য উপাদানগুলির সংস্পর্শে থাকা একজন ব্যক্তির ক্যানসার এবং শ্বাসযন্ত্রের নানা সমস‌্যা দেখা যায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement