সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক বছর আগে ঠিক এই সময়ই শিব সেনা ভেঙেছিল বিজেপি। আর রবিবারের বারবেলায় গেরুয়া শিবির ভেঙে দিল প্রবীণ রাজনীতিবিদ শরদ পওয়ারের দল এনসিপি। ঘটনাক্রম এক, কার্যপদ্ধতি এক। আগের বারও শিব সেনার প্রভাবশালী নেতা একনাথ শিণ্ডেকে কুরসির লোভ দেখিয়ে উদ্ধব শিবিরে হানা দিয়েছিলেন অমিত শাহরা, এবার অজিত পওয়ারের (Ajit Pawar) সঙ্গেও একই কাণ্ড ঘটাল বিজেপি। এবারে উপমুখ্যমন্ত্রী পদ দিয়ে ভাঙানো হল অজিত পওয়ারকে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, মহারাষ্ট্র নিয়েই কেন এত বাড়াবাড়ি মোদি-শাহদের (Amit Shah)? বিরোধী দল আরও অনেক রাজ্যেই আছে। নিন্দুকেরা বলেন, অমিত শাহ চাইলে অন্য যে কোনও রাজ্যেই দল ভাঙাতে পারেন। তাহলে বারবার কেন মহারাষ্ট্র? আসলে এ সব কিছুর নেপথ্যেই রয়েছে লোকসভার অঙ্ক। উনিশের লোকসভায় বিজেপির সঙ্গে শিব সেনার (Shiv Sena) জোট ছিল। সেবারে মহারাষ্ট্রের ৪৮ আসনের মধ্যে চল্লিশের বেশি আসন দখল করে সেই গেরুয়া জোট। কিন্তু তারপর মারাঠা রাজনীতিতে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। বদলেছে গোটা দেশের রাজনীতিও।
[আরও পড়ুন: স্বামীর রোষে বাদ পড়েছিল কব্জি, কৃত্রিম হাতে লিখেই নির্মমতার কাহিনি মলাটবন্দি করলেন রেণু]
মহারাষ্ট্রে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে উদ্ধব ঠাকরে কংগ্রেসের (Congress) হাত ধরেছেন। আবার বিহারে নীতীশ কুমার বিহারে বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে বিরোধী শিবিরে হাত মিলিয়েছেন। যার ফলে বিহার এবং মহারাষ্ট্র, একেবারে পাটিগণিতের হিসাবে এই দুই রাজ্যে জোট রাজনীতিতে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে গেরুয়া শিবির। মহারাষ্ট্রে শিব সেনা, কংগ্রেস, এনসিপি জোট এবং বিহারে জেডিইউ, আরজেডি এবং কংগ্রেসের জোটকে বিজেপির থেকে শক্তিশালী মনে হচ্ছিল। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই দুই রাজ্যে লোকসভার ৮৮টি আসন আছে। এতগুলি আসনে পিছিয়ে পড়াটা মুখ বুঝে মেনে নিতে পারেনি গেরুয়া শিবির।
[আরও পড়ুন: জঙ্গল থেকে লোকালয়ে হায়না, আতঙ্কে পিটিয়ে মারল উত্তেজিত জনতা! ভাইরাল ভিডিওয় বিতর্ক]
বিরোধীদের দাবি, পিছিয়ে পড়ার এই আশঙ্কা থেকেই হয়তো এই দুই রাজ্যে দল ভাঙানোর খেলায় মেতেছে বিজেপি। একদিকে বিহারে জেডিইউ নেতা আরসিপি সিংকে দলে টেনেছে, অন্যদিকে দলে নিজেদের শিবিরে ভিড়িয়েছে শিব সেনার একনাথ শিণ্ডেকে। এমনকী শিণ্ডের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদও ছেড়ে দিয়েছেন দেবেন্দ্র ফড়ণবিস। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, শিণ্ডেদের ভাঙানোর পরও মারাঠা রাজনীতিতে বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেনি গেরুয়া শিবির। অন্তত কয়েকটি সমীক্ষক সংস্থা তেমনটাই দাবি করেছে। তাই এবার আরও বড় আঘাত হানল গেরুয়া শিবির। একেবারে বিরোধী শিবিরের অন্যতম মুখ শরদ পওয়ারের দলেই চিড় ধরাল তাঁরা।
এনসিপি ভাঙার পিছনে বিজেপির আরেকটা উদ্দেশ্যও আছে। আসলে দেশজুড়ে বিরোধীরা যে একজোট হচ্ছে, সেই বিরোধী জোটের অন্যতম বড় মুখ শরদ পওয়ার। সম্প্রতি কর্ণাটক বিধানসভার ফল এবং পাটনার মেগা বৈঠকের পর বিরোধী শিবির বেশ আত্মবিশ্বাসী। দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী একটা ন্যারেটিভও তৈরি হচ্ছিল। সেটা ভাঙতে বিরোধী শিবিরকে একটা জোরাল ধাক্কা দেওয়ার দরকার ছিল, যা লোকসভার আগে বিরোধীদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারে। এনসিপি ভেঙে সম্ভবত সেটাই করতে চাইল গেরুয়া শিবির।