ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: এতদিন ফ্রন্ট শরিকদের আসন নিয়ে ‘খবরদারি’ করতে দেখা যাচ্ছিল সিপিএমকে। এবার জোট শরিক কংগ্রেসের প্রার্থী নিয়েও একই কাজ শুরু করেছে তারা। দার্জিলিংয়ে কংগ্রেসের হয়ে বিনয় তামাং প্রার্থী হতে পারেন বলে চর্চা শুরু হয়েছিল। সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে পাহাড়ি দলগুলোর সমর্থন একজোট হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু পাহাড়ে আচমকা হাওয়া বদল! হামরো পার্টির অজয় এডওয়ার্ড (Ajoy Edwards) দার্জিলিংয়ে ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধি হিসাবে নির্দল প্রার্থী হলে তাঁকে সমর্থন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সিপিএম। তার মধ্যে মঙ্গলবারই বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন অজয়। যতটুকু জানা গিয়েছে ২৯ মার্চ আরেক দফায় তাঁর সঙ্গে বসবেন হামরো নেতা। এর মাঝে এই দুই তরফের সমর্থন আর নিজের মনের ইচ্ছার কথা কংগ্রেস হাইকমান্ডকে জানাতে দিল্লি যাচ্ছেন তিনি। জানা যাচ্ছে, রাহুল গান্ধীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক হতে পারে।
এই যখন পরিস্থিতি, তখন ঘনিষ্ঠদের মধ্যে নিজের ক্ষোভ চেপে রাখেননি বিনয় তামাংও। অজয়ের কিছুটা মন বদলের খবর তিনিও রাখেন। বিনয় আশা করেছিলেন উত্তরবঙ্গের প্রথম দফা প্রার্থিতালিকায় তাঁর নাম দার্জিলিংয়ের প্রার্থী হিসাবে থাকবে। কিন্তু তা না থাকায় প্রথম থেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন বিনয়। পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে তা আরও জটিল আকার নিতে পারে। এমনকী, কংগ্রেস আর সিপিএমের (CPM) দার্জিলিংয়ের আসন ভাগ নিয়ে পাহাড়ে আবার ক্ষোভ দাঁনা বাঁধতে পারে। অজয় এদিন জানিয়েছেন, “বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গেও সমর্থন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সবটা আমরা চূড়ান্ত করব দু-একদিনেই।” সূত্রের খবর, হামরো পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে এ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে অজয়ের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে একপ্রকার সিলমোহর পড়েছে।
[আরও পড়ুন: আত্মপ্রচারেই ব্যস্ত নেতারা! ভোটের বাজারেও ধুঁকছে পুরুলিয়ায় তৃণমূলের সোশ্যাল সাইট]
বিনয়ের এদিন একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ভাইরাল হয়। তাতে তাঁর ক্ষোভ যে প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে তা স্পষ্ট। তিনি সেই মেসেজে পরিষ্কার লিখেছেন, ‘কংগ্রেস হাইকমান্ড এত বিলম্ব করছে কেন! এটা কার্যত আত্মঘাতী পরিস্থিতি।’ এই মেসেজ নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “পাহাড়ে কংগ্রেসকে সমর্থনের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেই সুযোগে অনেক আগেই প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়া উচিত ছিল। কেন এত দেরি করছে বোঝা মুশকিল।” দার্জিলিংয়ে প্রার্থী নিয়ে এই অসন্তোষের মধ্যে দুরকম পদক্ষেপ সামনে এসেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুংয়ের। দুদিন আগেই কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা জানিয়েছিলেন তিনি। রীতিমতো কংগ্রেস প্রশস্তি করেন। কিন্তু মঙ্গলবারই আবার অজয় এডওয়ার্ডের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। যদিও অজয়কে বিমল কতটা আলাদা করে সমর্থন দিতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ কংগ্রেস নিয়ে প্রশস্তি গাওয়ার দুদিন আগেই তিনি বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। তার দুদিনের মধ্যে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরেছেন কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা বলে।
গুরুং জানিয়েছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর আলোচনা চলছে। কংগ্রেসের চিঠি পেয়ে রোশন গিরির নেতৃত্বে তাঁদের দল দিল্লিতে গিয়েছে। সেখানে আলোচনা চলছে। তাঁর কথায়, “আমরা কংগ্রেসের কাছে গোর্খাল্যান্ড এবং এগারোটি জনজাতির আদিবাসী স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছি। ওরা যদি সম্মতি জানায় এবং নির্বাচনী ইস্তাহারে দাবি দুটি রাখে, তবে আমরা কংগ্রেসকে সমর্থনের কথা ভাবব।” পাহাড়ের বিশেষজ্ঞ মহলের আবার বলছে অন্য কথা। তাদের বক্তব্য, গুরুং কী করবে তা এখন তাঁর কাছেই স্পষ্ট নয়। তিনি দর কষাকষি করছেন। কংগ্রেসের সঙ্গেও থাকার কথা বলছেন। আবার অজয়ের সঙ্গেও কথা বলছেন। অজয় আবার দিল্লি যাচ্ছেন কথা বলতে। ফলে জটিল পরিস্থিতিতে এখন রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা ছাড়া উপায় থাকছে না।