সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গল্পটা অনেকটা একই। পুলিশের বন্দুক কেড়ে পালানোর চেষ্টা ভয়ংকর অপরাধে অভিযুক্তের, তার পর পুলিশের পালটা গুলিতে মৃত্যু। উত্তরপ্রদেশ, অসম, হায়দরাবাদের সেই একই ছবির পুনরাবৃত্তি হল মহারাষ্ট্রে। বদলাপুরে দুই স্কুলছাত্রীকে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় সোমবার এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে মূল অভিযুক্ত অক্ষয় শিন্ডের। তবে এই ঘটনা নিছক সাধারণ ঘটনা হিসেবে মানতে নারাজ অক্ষয়ের মা। তাঁর অভিযোগ, পুলিশের এনকাউন্টারের পিছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। শুধু তাই নয়, জানা যাচ্ছে যার গুলিতে অক্ষয়ের মৃত্যু হয়েছে সেই পুলিশ আধিকারিক দীর্ঘদিন কাজ করেছেন মুম্বইয়ের নামী এনকাউন্টার স্পেশালিষ্টের প্রদীপ শর্মার সঙ্গে। সম্প্রতি এই মামলার তদন্তে আনা হয়েছিল তাঁকে।
গত ১৬ আগস্ট ঠানের বদলাপুরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শৌচালয়ে দুই খুদে পড়ুয়ার উপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত স্কুলেরই ২৩ বছরের সাফাইকর্মী। এই ঘটনায় থানায় শিশুর পরিবার অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ ওঠে। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা পরে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ফুঁসে ওঠে জনতা। শুরু হয় বিক্ষোভ আন্দোলন। গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত অক্ষয় শিন্ডেকে। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, সোমবার সন্ধেয় তালোজা জেল থেকে অভিযুক্ত অক্ষয়কে নিয়ে ফিরছিলেন পুলিশকর্মীরা। অভিযোগ সাড়ে ৫টা নাগাদ মুমব্রা বাইপাসের কাছে এক কনস্টেবলের বন্দুক ছিনিয়ে নেন অক্ষয়। তারপর কনস্টেবলকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। আত্মরক্ষার্থে এক অফিসার অভিযুক্ত অক্ষয়কে লক্ষ্য করে গুলি চালান। তাতেই গুরুতর জখম হন অক্ষয়। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় সরাসরি পুলিশের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলেছেন অক্ষয়ের মা। তাঁর দাবি, 'আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষও সরাসরি পুলিশের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। আমরা অক্ষয়ের দেহ নেব না যতক্ষণ না এই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে, এবং অপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছে।' মৃতের পরিবারের আরও অভিযোগ, থানায় ভয়ংকর অত্যাচার চালানো হয়েছিল অক্ষয়ের উপর। এমনকি পুলিশ জোর করে কোনও কিছুতে সই করিয়ে নিয়েছিল। যদিও কিসে সই করানো হয়েছিল তা জানাতে পারেনি পরিবার। তবে পুলিশকে গুলির বিষয় একেবারেই মানতে নারাজ মৃতের মা। তিনি বলেন, "আমার ছেলে বাজির আওয়াজ শুনলে ভয় পায়, একা রাস্তা পার হতে পারে না। সে পুলিশকে গুলি করবে এটা কোনওভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।'
এর পাশাপাশি আরও একটি তথ্য প্রকাশ্যে আসছে। বদলাপুর কাণ্ডে যার গুলিতে অক্ষয়ের মৃত্যু হয়েছে তিনি হলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর সঞ্জয় শিন্ডে। তবে এনার আরও একটি পরিচয় হল, ইনি সাসপেন্ড পুলিশ আধিকারিক প্রদীপ শর্মার টিমের সদস্য। মুম্বই-সহ গোটা দেশ যাকে চেনে 'এনকাউন্টার স্পেশালিষ্ট' হিসেবে। কর্মজীবনে ১০০টির বেশি এনকাউন্টার করেছেন। ভুয়ো এনকাউন্টারের অভিযোগে জেলেও যেতে হয় তাঁকে। পুলিশ ইন্সপেক্টর সঞ্জয় শিন্ডে ছিলেন তাঁরই সহযোগী। একাধিক অভিযানে তাঁর সঙ্গ দিয়েছেন। দাউদের ভাই ইকবাল কাসকরকে গ্রেপ্তারে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছিলেন এই সঞ্জয় শিন্ডে। সম্প্রতি বদলাপুর যৌন নির্যাতন কাণ্ডের তদন্তে যে সিট গঠন করা হয়েছিল তাঁর অন্যতম আধিকারিক ছিলেন দাপুটে এই পুলিশ কর্তা।