রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: রামায়ণ কি একটাই? নাকি অনেক রামায়ণ আছে? বাল্মীকি, তুলসীদাস, কৃত্তিবাস….এরকম প্রায় তিনশো রামায়ণ যা দক্ষিণ ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত, তার সবক’টিতে রাম কি একইরকম? কানপুরের কৈলাস মন্দির প্রাঙ্গণে রাবণের মন্দিরই বা আছে কেন? মহম্মদ ঘোরি কি ধর্মীয় কারণে রাজপুতদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন? যদি তাই হয়, তাহলে পৃথ্বীরাজ চৌহানের ঘনিষ্ঠ জয়চন্দ্র এই যুদ্ধে মহম্মদ ঘোরির সঙ্গে হাত মেলালেন কেন? ইতিহাসকে বদলে দেওয়া হচ্ছে। ইতিহাসে লাগছে গেরুয়া ছোঁয়া। এমনটাই মনে করছে সিপিএম। তাই মানুষের সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে উন্মুক্ত ক্লাস নেওয়ার কর্মসূচি শুরু করেছে আলিমুদ্দিন।
জানা গিয়েছে, আপাতত কলকাতা জেলা পার্টির পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। গোটা রাজ্যজুড়েই তা হবে। মানুষের দরবারে মানুষের ইতিহাস তুলে ধরতে হাজির হবে সিপিএম। ১ ডিসেম্বর থেকে কলকাতা শহরের ২৫টি জায়গায় ক্লাস নেওয়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। আর এই ক্লাস নেবেন শিক্ষক, ঐতিহাসিক এবং গবেষকরাই। সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার জানিয়েছেন, ‘‘দেশের ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চাইছে আরএসএস। নিজেদের মনগড়া কথা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করতে চাইছে। আমরা বলেছি কিছুতেই সেই কাজ হতে দেওয়া যাবে না। ৬ ডিসেম্বর আসছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার মতো নক্কারজনক কাজ হয়েছিল। এই কথা ইতিহাসে কালো দিন হয়ে থাকবে। আমরা ওই দিন মিছিল করব। ইতিহাসের কথা মানুষের কাছে তুলে ধরতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে রাজ্য জুড়ে হবে।’’
[আরও পড়ুন: সস্তায় বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ মিলছে বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে, জানেন কীভাবে?]
একটি লিফলেট প্রকাশ করা হয়েছে কলকাতা জেলা সিপিএমের তরফে। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ইতিহাসকে নতুন করে লেখাচ্ছে বিজেপি। সেই ইতিহাসকে মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। সেখানে ধর্ম, জাতপাত প্রাধান্য পাচ্ছে। আক্রান্ত হবে যুক্তিবোধ, বিজ্ঞান চেতনা। পাল্টানো হবে সিলেবাস। তাই এখন প্রশ্ন করার সময়।
তাহলে কি বিজেপি বিরোধিতা বাড়াতে চলেছে সিপিএম? রাজনৈতিক মহল মনে করছে, অন্ধ তৃণমূল বিরোধিতা করতে গিয়ে নিজেদের ভোট ব্যাংকে বড় অংশ গেরুয়া শিবিরে চলে গিয়েছিল। তাই বিজেপির বিরুদ্ধেও আক্রমণের ঝাঁজ বাড়াতে চায় আলিমুদ্দিন। আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তলে তলে বিজেপির সঙ্গে জোট করছে সিপিএম। এই অভিযোগ তুলে রাম-বাম তত্ত্বকে সামনে নিয়ে আসছে শাসকদল। তাই কি সংখ্যালঘু ভোটের কথা মাথায় রেখেই গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে চাইছে রাজ্য সিপিএম? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে। আগামী ৬ ডিসেম্বর সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দিবস পালন করবে সিপিএম। এবার প্রচার কর্মসূচিও ভিন্ন হতে পারে।