সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: গোপনে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। তেমনই কিছুটা আড়াল রেখেই ফিরে এলেন। পাহাড়ের একদা প্রভাবশালী নেতা বিমল গুরুং (Bimal Gurung) বুধবার যেভাবে প্রকাশ্যে এলেন তা একেবারেই অপ্রত্যাশিত আপাতদৃষ্টিতে। এরপর তাঁর বক্তব্য আরও চমকপ্রদ। বিজেপির তুমুল সমালোচনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে আগামী বিধানসভায় লড়াইয়ের বার্তা দিলেন।
এমন ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি। একে একে প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বর্তমান সভাপতি বিনয় তামাং অবশ্য গুরুংয়ের প্রকাশ্যে আসা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেছেন, ”বিষয়টি টেলিভিশনে দেখেছি। আমরা এ বিষয়ে কিছুই জানি না। কোনও মন্তব্য করব না।”
[আরও পড়ুন: গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে অনড় থেকেও বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কছেদ, মমতার দ্বারস্থ বিমল গুরুং]
গুরুংয়ের মুখে বিজেপির তুমুল সমালোচনা শুনে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) বক্তব্য, “আমরা কখনও গোর্খাল্যান্ড করে দেব, বলিনি। গোর্খাল্যান্ড ওদের ইস্যু। আমরা পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান চেয়েছিলাম। তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বারবার চেষ্টা করেছে। রাজ্যকে বলেছে। রাজ্যের অসহযোগিতার জন্য সফলতা আসেনি।” এরপর তিনি রাজ্য সরকারের প্রতি তোপ দেগে বলেছেন, ”একসময় তো গুরুং তৃণমূলের সঙ্গে ছিলেন। কেন ছেড়ে বিজেপির দিকে এসেছিলেন? তিন বছর ধরে ওঁকে এবং কয়েকশো যুবককে পাহাড়ের বাইরে থাকতে হচ্ছে। তার জন্য তো বিজেপি দায়ী নয়। তৃণমূলের রাজনৈতিক অত্যাচার ও পুলিশের অত্যাচারে বহু মানুষকে পাহাড়ছাড়া হতে হয়েছে। আজ ছত্রধর মাহাতোর স্টাইলে পাহাড়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রবিরোধী আইন থাকা সত্ত্বেও গুরুংকে এনে প্রেস কনফারেন্স করানো হচ্ছে? উনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী আইন তো মুখ্যমন্ত্রীই লাগিয়েছেন। আজ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে ক্ষমতার জন্য। পাহাড়ে ফিরতে হবে, বাধ্যবাধকতা আছে তাই তৃণমূলের হাত ধরে ফিরতে চাইছেন গুরুংরা। রাজনৈতিক পরিবর্তন তো হতেই থাকে, আরও হবে। আমরা চাইবো পাহাড়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক।”
বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের (Abdul Mannan) অভিযোগ, “পাহাড় যে হাসছে না, তা আরও একবার স্পষ্ট হল। তিন বছর ধরে যে চোর-পুলিশ খেলার নাটক চলছে তা সামনে চলে এসেছে।” মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তাঁর খোঁচা, এই বিমল গুরুং একটা সময় মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মা’ বলেছিলেন। অথচ বনিবনা না হওয়ায় তিনি বিজেপিতে চলে যান। তখন তাঁর বিরুদ্ধে UAPA’র মতো গুরুতর অভিযোগ দেওয়া হয়। তারপরেই ফেরার হয়ে যান গুরুং ও তাঁর সঙ্গীরা। এতদিন রাজ্য পুলিশ তাঁদের খুঁজে পায়নি। এসবই নাটকের অঙ্গ বলে মনে করেন বিরোধী দলনেতা। তবে গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে বিমল গুরুংদের অবস্থানকে তৃণমূল সমর্থন করে কিনা, তা স্পষ্ট করার দাবি জানান আবদুল মান্নান।
[আরও পড়ুন: পুজোর কলকাতায় অশান্তির ছক! অস্ত্র-সহ তারাতলা থেকে ধৃত ২]
গুরুং ইস্যুতে কংগ্রেসের সুরেই কথা বলেছেন শিলিগুড়ির বিধায়ক ও সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। তিনি জানান, এটাই ভবিতব্য ছিল। ২০১১ সালে পাহাড়ে জেতার জন্য গুরুং বাহিনীকে ব্যবহার করেন তৃণমূলনেত্রী। সবরকম কাজে সমর্থন ও মদত দেন। পরে দু’পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল বাধলে গাঁটছড়া ভেঙে যায়। কিন্তু তিন বছর ধরে গুরুংকে খুঁজে না পাওয়ার পিছনে দু’পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া আজ স্পষ্ট হলো।
অন্যদিকে, একদা মোর্চা নেতা, আজকের জন আন্দোলন পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হরকা বাহাদুর ছেত্রী বলছেন অন্য কথা। তাঁর বক্তব্য, গুরুং বুঝতে পেরেছেন যে পাহাড়ে ফিরতে হলে তৃণমূলের সাহায্য ছাড়া উপায় নেই। রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না করলে পাহাড়ে তাঁর থাকা সম্ভব নয়। আর বুঝেই তিনি ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হতে চাইছেন। এটা বুদ্ধিমানের মতো কাজ। হরকা বাহাদুর ছেত্রী আরও দাবি করেন, উনি যখন মোর্চায় ছিলেন, তখনও গুরুংকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই পাহাড়ে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব। তাই তাঁর সঙ্গে বিবাদ করে লাভ নেই। সবমিলিয়ে, একুশের আগে বিমল গুরুংয়ের প্রত্যাবর্তনে বেশ ঝড় বয়ে গিয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে।