নন্দন দত্ত, সিউড়ি: আমেরিকায় (America) গিয়ে খুন হয়েছিলেন বীরভূমের সিউড়ির যুবক নৃত্যশিল্পী অমরনাথ ঘোষ (Amarnath Ghosh)। ২ সপ্তাহেরও বেশি সময় পর শুক্রবার দেশে ফিরল তাঁর মৃতদেহ। শুক্রবার সন্ধ্যে ৭ টা নাগাদ দমদম বিমানবন্দরে পৌঁছায় অমরনাথের কফিনবন্দি দেহ। রাত ১টা নাগাদ দেহ নিয়ে শনিবার ভোরে সিউড়ি পৌঁছায় মৃতের পরিবার।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। অমরনাথের এক বন্ধু ফোন করে জানায়, অমরনাথকে আমেরিকায় গুলি করে খুন করা হয়েছে। দেহ ফেরানোর জন্য পরিবারের কারও পরিচয়পত্র প্রয়োজন। আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই বন্ধু নাকি দাবি করেন, কোনও নথিপত্রের প্রয়োজন নেই। আমেরিকার তরফ থেকে দেহ সৎকারের বন্দোবস্ত করা হবে। এর পরই সোজা পুলিশের দ্বারস্থ হন নৃত্যশিল্পীর পরিবারের লোকজনেরা। কে বা কারা খুন করেছে, কেনই বা খুন হলেন অমরনাথ, তা নিয়ে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। এরপর ১ মার্চ আমেরিকার ভারতীয় দূতাবাসের (Indian Embassy) তরফে ফোন করে তাঁর মৃত্যু কথা জানানো হয়। মৃতের পরিবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হলে সরকারের তরফে দেহ ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন: দমদমে টানা ৫২ ঘণ্টা কাজ, বাতিল ১৪৩টি ট্রেন, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি]
শনিবার বাড়িতে দাদার দেহ নিয়ে আসার পর অমরনাথের খুড়তুতো বোন সুরশ্রী ঘোষ জানান, “গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দাদাকে গুলি করে খুন করা হয় আমেরিকায়। আমরা খবর পাই ২৯ তারিখ। যদিও এই মৃত্যুর খবর দিয়ে আমাদের মধ্যে সন্দেহ ছিল। এরপর ১ মার্চ দূতাবাসে তরফে ফোন পাওয়ার পর আমরা নিশ্চিত হই দাদার মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার পর ভারতীয় দূতাবাস উদ্যোগ নিয়ে দেহ ফেরানোর ব্যবস্থা করে। শুক্রবার দমদম বিমানবন্দর থেকে রাত ১ টা নাগাদ আমরা দেহ পাই। ওঁর বাবা, মা আগেই মারা গিয়েছেন, ফলে আমরাই দাদার শেষকৃত্য করব।”
[আরও পড়ুন: সভা থেকে ফেরার পথে ভয়ংকর দুর্ঘটনা, মৃত্যু তৃণমূল নেত্রীর দুই শিশু সন্তানের]
সিউড়ির রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দা অমরনাথের ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল নৃত্যশিল্পী হওয়ার। ৩৫ বছরের অমরনাথ সিউড়ি শ্রীরামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠের মেধাবী ছাত্র ছিল। যোধপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সাইকোলজি নিয়ে স্নাতক। চেন্নাই কলাক্ষেত্র থেকে ২০০৬ সালে নৃত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কুচিপুড়ি, ভরতনাট্যম, রবীন্দ্রনৃত্য, মণিপুরি, কথক নিয়ে তালিম নিয়েছেন। ২০১১ সালে ভরতনাট্যমে ফার্স্ট ক্লাস ডিপ্লোমা পান। সারা দেশের বিভিন্ন নৃত্য উৎসবের পাশাপাশি তখন থেকেই বিদেশ যাত্রা।
২০১৪ সালে প্রথম ক্যালিফোর্নিয়াতে তাঁর নৃত্য প্রদর্শন হয়। হংকং, জর্জিয়া, টেক্সাস, মালয়েশিয়া, পেনাং ফেস্টিভ্যাল-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক ২০১৩ সালে কুচিপুড়িতে ন্যাশনাল স্কলারশিপ দেয়। পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত দুবছর ধরে আমেরিকার ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি সেন্ট লুইসে নৃত্য শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর।