বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: রাজ্যে দ্বিতীয় দফার লোকসভা নির্বাচনী প্রচারে রবিবার একই দিনে পাহাড়-সমতলে বিজেপির দুটি হাই ভোল্টেজ সভা। সকালে দার্জিলিংয়ে সভা করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দুপুরে শিলিগুড়িতে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সভা। এদিনই মালদহ উত্তর এবং মুর্শিদাবাদে সভা করবেন তিনি। এদিকে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর শৈল শহরে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই দিক থেকে এদিনের সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। কারণ এখানে দলীয় প্রার্থী রাজু বিস্তার পথের কাটা হয়েছেন দলের কার্শিয়াংয়ের বিদ্রোহী বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। এছাড়াও রয়েছে ভূমিপুত্র প্রার্থী ইস্যু এবং দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে গোর্খাদের সমস্যার কথা না থাকায় বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ। এখন দেখার এদিনের সভা থেকে কি বার্তা দেন শাহ, পাহাড়বাসীকে কতটা আশ্বস্ত করতে পারেন তিনি।
লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ পর্ব শেষ হয়েছে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৮১.৯১ শতাংশ। এই বিপুল অঙ্কের ভোট গেরুয়া শিবিরের চিন্তার কারণ হয়েছে। তাই ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে আর ঝুঁকি নিতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতো হেভিওয়েট বক্তাদের দিয়ে শুরু হচ্ছে হাই ভোল্টেজ প্রচার সভা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকদিনের মধ্যে পাহাড়ে প্রচারে আসছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রাজনৈতিক মহলের মতে, এবার মনোনয়নের অনেক আগে থেকে পাহাড় ভূমিপুত্র প্রার্থীর দাবিতে সরব ছিল। ওই কারণে একসময় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব প্রাক্তন বিদেশ সচিব তথা দেশের অন্যতম সফল কূটনীতিক হর্ষবর্ধন শ্রীংলাকে নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। যদিও পরবর্তীতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং জিএনএলএফের চাপে বিজেপির তারা পাহাড়ে প্রার্থী পরিবর্তনের পরম্পরা থেকে সরে এক রকম ঝুঁকি নিয়েই ফের রাজু বিস্তাকে প্রার্থী করেন। যদিও পরপর তিন দফায় জিতে নেওয়া দার্জিলিং লোকসভা আসন গেরুয়া শিবিরের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো ওই কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রের কাওয়াখালি থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলেন। কার্যত দার্জিলিং কেন্দ্রটি দখলে রাখতে মরিয়া বিজেপি। হয়তো তাই একের পর এক হেভিওয়েট নেতাকে প্রচারে পাঠানো শুরু হয়েছে।
[আরও পড়ুন: জয়সলমেরকে টেক্কা কলকাতার, ৪৫ ডিগ্রি পার পানাগড়ে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সানস্ট্রোকও]
এদিন সকাল এগারোটায় শৈল শহরের লেবং গোর্খা স্টেডিয়ামে বক্তব্য রাখবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে হেলিকপ্টারে লেবং আর্মি গ্রাউন্ডে পৌঁছবেন। সেখান থেকে সড়ক পথে যাবেন স্টেডিয়ামে। পাহাড় বিজেপির সভাপতি কল্যাণ দেওয়ান জানান, এদিনের সভা মঞ্চে জোট সঙ্গী জিএনএলএফ পার্টির সভাপতি মন ঘিসিং, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুং, সিপিআরএম সভাপতি আরবি রাই, দাওয়া পাখরিন থাকবেন। পাহাড় বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুজেন্দ্র রাই বলেন, "পাহাড়বাসী শাহর সভার দিকে তাকিয়ে আছে।" যদিও ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সুপ্রিমো অনীত থাপা বলেন, "বিধানসভা নির্বাচনের সময় এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনেক কথা বলেছিলেন। প্রার্থী জিতলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি।" এদিকে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দময় বর্মন জানান, শিলিগুড়ি শহরের টিকিয়াপাড়া ময়দানে বেলা দুটা নাগাদ পৌঁছবেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। ওই সভা থেকে উঠে আসতে পারে 'চিকেন নেক' হিসেবে বেশি পরিচিত ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংযোগ সেতু শিলিগুড়ির গুরুত্বের প্রসঙ্গ।