অভিষেক চৌধুরী, কালনা: সোনার গহনা-সহ সমস্ত সম্পত্তি শ্বশুর ও স্ত্রীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েও সাধ মেটেনি জামাইয়ের। অন্য এক মহিলাকে বিয়েও করে নেয় গুণধর। উচ্চাকাঙ্খী জামাই তারপর অন্যান্য আরও স্বপ্নপূরণ করতে প্রথম স্ত্রীর বাপের বাড়ির সম্পত্তি বন্ধক দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা লোন নেওয়ার ছকও কষে ফেলে। তাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শ্বশুর। আর তার পরিণতি হল মর্মান্তিক। শ্বশুরকে খুনের (Murder) অভিযোগ উঠল জামাইয়ের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় বুধবার ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) মন্তেশ্বরের দীর্ঘনগর এলাকায়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃত নূর আলম মিদ্দে মন্তেশ্বরের দীর্ঘনগর এলাকার নবদ্বীপ-বর্ধমান রোডের বাসিন্দা। বুধবার সকালে বাড়ি সংলগ্ন গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টারের মধ্যে ওই বৃদ্ধকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের লোকজন। তাঁদের দাবি, ভারি কিছু জিনিস দিয়ে তাঁর মুখে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় থেঁতলে খুন করা হয়েছে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষতচিহ্নও লক্ষ্য করা যায়। খবর পেয়েই মন্তেশ্বর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। বৃদ্ধর পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি মানুষের বিপদে-আপদে আয়ুর্বেদিক ওষুধ দিয়ে সহযোগিতা করতেন। ওই ব্যক্তির একটিই মাত্র মেয়ে হাসিনার সঙ্গে আটবছর আগে মন্তেশ্বরের আজহারনগর গ্রামের বাসিন্দা নুসরত শেখের বিয়ে হয়। তাদের আবার তিন সন্তানও রয়েছে। মেয়ে-জামাইয়ের সুখের কথা ভেবে দীর্ঘনগরের বাড়ির সামনেই নূর আলম একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টারও করে দেন জামাইকে। শুধু তাই নয়, জমি বিক্রি করে কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে জামাইকে একটি পিক আপ ভ্যান গাড়িও কিনে দেন কয়েক বছর আগে। অভিযোগ, এরপরেই শ্বশুরকে জমি, বাড়ি সম্পত্তি তাঁর নামে লিখে দেওয়ার চাপ দিতেই জামাইকে তা দিয়েও দেন শ্বশুর। তারপর থেকেই জমি ও বাড়ি বন্ধক দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা লোন নেওয়ার জন্য সে উঠেপড়ে লাগে। আর এর মধ্যেই বৃদ্ধ শ্বশুর জানতে পারেন যে তাঁর জামাই স্থানীয় মোজাহারনগর গ্রামের অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেছে।
[আরও পড়ুন: আড়াই মিনিটে ১১১ টি পাখির নাম বলে India Book of Records-এ নাম তুলল চন্দ্রকোনার খুদে]
একথা জানাজানি হতেই অশান্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে ওঠে। জামাইয়ের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগও দায়ের করেন তাঁরা। এরপর থেকেই জামাই বেপাত্তা হয়ে যায়। মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওই বৃদ্ধ শেষপর্যন্ত জামাইকে লিখে দেওয়া সব সম্পত্তি মেয়েকে দেবে বলে স্থির করে। আর তারপর থেকেই ফোনে শ্বশুরকে মেরে ফেলার হুমকিও দিতে থাকে অভিযুক্ত। মৃতার মেয়ে বলেন, “শ্বশুরবাড়িতে আমার উপর অত্যাচার হত। তাই বাবা আমাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আমার সুখের কথা ভেবে স্বামীকে ব্যবসাও করে দেয় বাবা। আরও অনেক কিছু নিয়ে ও একজনকে বিয়ে করে কেরলে চলে যায়। এই খুনের ঘটনায় আমার স্বামীই জড়িত।” ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। কালনার এসডিপিও সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য বলেন, “মন্তেশ্বরের ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এই ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে।”