সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অঞ্জন দত্ত মানেই, বেলা বোসের সেই ফোন নম্বর, রঞ্জনার পাড়া, অঞ্জন দত্ত মানেই দার্জিলিঙের খাদের ধারের রেলিং। গিটার হাতে তুলে বাঙালির কানে পৌঁছে দেওয়া প্রেম, বিরহের নতুন সুর। তবে শুধুই কী গান? নাহ, অঞ্জন দত্ত মানেই 'বং কানেকশন', 'ম্যাডলি বাঙালি' কিংবা 'বো বারাকস'। সিনেমার পর্দা থেকে আবার নাটকের মঞ্চেও অভিনেতা, গায়ক, পরিচালক। এখনও নাট্যপ্রেমী মানুষ, তাঁর গ্যালিলিও ভুলতে পারেননি। সেই অঞ্জন দত্তই হঠাৎ বার্তা দিলেন, শেষ নাটকের! ফেসবুকে নতুন নাটকের পোস্টার শেয়ার করে, অঞ্জন দত্ত লিখলেন এটাই তাঁর শেষ নাটক। হঠাৎ কী হল?
কয়েক মাস আগেই মুক্তি পেয়েছিল অঞ্জন দত্তর ‘চালচিত্র এখন’ ছবিটি। এই ছবির মধ্য়ে দিয়েই কিংবদন্তি মৃণাল সেনকে বিশেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে ছিলেন পরিচালক অঞ্জন দত্ত। দর্শক থেকে সমালোচক সবার কাছেই প্রশংসা পেয়েছিল অঞ্জন দত্তর ‘চালচিত্র এখন’ ছবিটি। তবে এবার সিনেমার পর্দায় নয়, নাটকের মঞ্চে নিজের নতুন কাজকেই শেষ নাটক হিসেবে বার্তা দিলেন পরিচালক।
সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় অঞ্জন দত্ত লিখলেন, 'আমার শেষ নাটক।' সঙ্গে শেয়ার করলেন 'আরো একটা লেয়ার' নাটকের পোস্টার।
এর আগে জুন মাসে অঞ্জন দত্ত কিং লেয়ার নাটকের ঘোষণা করেছিলেন। সেই সময় ফেসবুকে অঞ্জন দত্ত লিখেছিলেন, ''আপনারা নানা জায়গায় ছড়িয়ে আছেন। কলকাতায় এসে আমার থিয়েটার দেখা সম্ভব নয়। মৃণাল দা কিন্তু চাইতেন আমি থিয়েটারটা না থামাই। তাই এই বছর সিনেমা আর নয়। থিয়েটার। শেক্সপিয়রের কিং লিয়র.… এই ৭১ বছর বয়সে এসে আবার থিয়েটারে মজা। শেক্সপিয়র আমার জীবনে প্রথম বার, কিং লিয়র।''
‘চালচিত্র এখন’ মুক্তির সময় অঞ্জন দত্ত সংবাদ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়ে ছিলেন, ''মৃণালবাবুর সঙ্গে আমার ৪২ বছরের যোগাযোগ। বলব, এটা যোগাযোগের থেকেও বেশি কিছু। বন্ধুত্বের, ঝগড়াঝাঁটির, ভালোবাসার আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। আমার রাজনৈতিক মতবাদ, প্রথম থেকেই ওঁর থেকে আলাদা ছিল। শেষদিন পর্যন্ত, ডাক্তার, কুণালের সঙ্গে আমার নামটাও ওর বাড়ির দেওয়ালের ওপর টাঙানো ছিল– যে বাকিরা মিস করলেও অঞ্জনকে ফোন করলে চলে আসবে। আমার ছবি হলে মৃণালদাকে ডেকে আনতাম, দেখাতাম। দেখবে, আমার সব কাজের মধ্যে আমি আছি। অর্থাৎ আমার গানে, সিনেমায়, আমার ব্যক্তিগত পছন্দ- জীবন আছে। যেমন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান জগতের প্রতি আমার প্রীতি বা দার্জিলিংয়ের প্রতি ভালোবাসা, আমার কসমোপলিটন কলকাতা, বাড়ি-বাবা-মা–এই সবই সিনেমায় এসেছে, কিন্তু মৃণাল সেনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক একফোঁটাও আসেনি সিনেমায়। যখন সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উদযাপন হচ্ছে, অনীকের ‘অপরাজিত’ বেরিয়েছে, তখন এই বিষয়টা আমি পার্সোনালি ফেস করি। এটা আমি করিনি কেন? খারাপ লেগেছিল যে, আমার ‘ডিউস’-টা দেওয়া হল না। এটা যখন মাথায় এল, তখন আমি আমার গল্পটা পেলাম। অনেকদিন আগে আমি একবার মৃণাল সেনকে বলেছিলাম, ‘আমি আপনার ওপর ডকুমেন্টারি করব।’ তখন গান করি। ভেবেছিলাম যা পয়সা উঠছে, সেখান থেকেই ডকুমেন্টারি করব। উনি বলেছিলেন– ‘করো, কিন্তু তুমি পার্সোনাল করবে। তোমার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে করবে।’ এই চিন্তাটা যখন আসে, একরাত্তির জেগে আমি গল্পটা পেয়ে যাই। কিন্তু সেই সময় যদি এই গল্পটা করতে পারতাম উনি প্রচণ্ড খুশি হতেন। এই যে আমি আজকে করে খাচ্ছি, কলকাতার ওপর গান লিখে, কলকাতাকে ভালোবাসে, সেটা মৃণাল সেন না হলে হতই না। আই হেটেড ক্যালকাটা একসময়, আমি আমার শ্রোতা বা দর্শকের মতো আমিও এনআরআই হয়ে যেতাম। কিন্তু ওই যে কলকাতা ছেড়ে যাওয়ার আগেই কলকাতাকে মিস করতে শুরু করলাম, এইটা মৃণালদার জন্য। এই গল্পটা আমার পেতে সময় লেগেছিল। কারণ একটা জিনিসকে দূর থেকে দেখতে হয়। এতদিন পর্যন্ত মৃণাল সেনকে আমি দূর থেকে দেখতে পাইনি। এখন দেখতে পাই। মজার, ইরেসপনসিবল, অদ্ভুত টাইপের ফাজিল, বোহেমিয়ান এই মানুষটার চেহারা। আমি নিজেকেও খুব ক্রিটিকালি দেখেছি। সেই সব আমি দেখতে পাচ্ছি বলে অনেস্টলি ছবিটা করেছি। ‘চালচিত্র’-র সময় যা যা হয়েছে সেটাই রেখেছি। আগে করলে হয়তো পুজো করার প্রবণতা হত। সেটা করিনি।''