shono
Advertisement

বাংলা সিনেমায় ‘প্রতিবাদী স্বর’ এখনও আছে, প্রমাণ করল ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে’

হলে যাওয়ার আগে জেনে নিন কেমন হয়েছে এই ছবি? The post বাংলা সিনেমায় ‘প্রতিবাদী স্বর’ এখনও আছে, প্রমাণ করল ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে’ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 07:49 PM Nov 29, 2019Updated: 07:49 PM Nov 29, 2019

চারুবাক: প্রধান চরিত্র তিন। বছর কয়েক আগে পর্যন্ত এই কলকাতা শহরের দেওয়াল, কখনও কখনও ফুটপাত পর্যন্ত সৌরবিজ্ঞানের নানা ছবি এঁকে কে সি পাল নামের এক দীন দরিদ্র ভদ্রলোক তায় গ্যালিলিওর বিশ্বাস নিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন পৃথিবী নয়। সূর্যই পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে। সেই কে সি পালকে টি সি পাল (মেঘনাদ) নাম দিয়ে ‘সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে’ ছবির একটি চরিত্র। দ্বিতীয় চরিত্র বামপন্থী মনোভাবাপন্ন ফিল্মি নায়ক চিরন্তন (চিরঞ্জিৎ), এই মুহূর্তে রাজনৈতিক চিন্তার দোলাচলে। তিন নম্বর চরিত্র হল ফিল্ম পরিচালক সঞ্জীব (অঙ্কন)। অনেকটাই হতাশা, স্বপ্নভঙ্গের শিকার। এই তিনটি চরিত্রের মানসিক টানাপোড়েনের সঙ্গে কাহিনীকার অরিজিৎ বিশ্বাস ও পারমিতা মুন্সি সুন্দরভাবে বুনে দিয়েছেন আজকের সময়ের আপসপন্থী রাজনীতি, সামাজিক অবস্থা, একাধিক রাজনৈতিক দলের দিকভ্রান্ত নীতি। অবশ্য তিনি ছবির উত্তরন ঘটিয়ে দেন আসার সুরে। সিনেমার ভাবনাতেও পরিচালক অরিজিৎ বিশ্বাস প্রথম ছবিতেই তাঁর নিজস্বতার পরিচয় রেখেছেন। আশপাশের ছবি করিয়েরা যখন নিশ্চিত আরাম ও স্বচ্ছন্দের ভাবনায় ‘বুঁদ’ হয়ে স্রোতের বিপরীতে একটি পদক্ষেপের কথাও মনে আনতে পারেন না। তখন অরিজিৎ সত্যিই দুঃসাহসের প্রমাণ দিলেন এই ছবিতে।

Advertisement

কে সি পালের মতো অতি সাধারণ একজন মানুষ চল্লিশ বছর পর্যন্ত নিজের বিশ্বাসের কাছে অবিচলিত থাকেন, সেই বিশ্বাস ভুল-সঠিক যাইি হোক! এমনকী চাপের কাচে মুচলেকা দেওয়ার পরও আবারও তিনি বেরিয়ে পড়েন ফেরিওয়ালা হয়ে নিজের বিশ্বাস বিক্রি করতে। অথচ বামপন্থী নায়ক চিরন্তন সঞ্জীবের জন্য বন্ধুকৃত্য করেন একটি ফর্মুলা ঘেঁষা বাণিজ্যিক ছবির চুক্তিতে একজনকে রাজি করিয়ে। যদিও সঞ্জীব শেষ পর্যন্ত চুক্তিপত্রে সই করেন না। তিনি গেয়ে ওঠেন, “হাম ভুখে সে মরনেওয়ালে… উড়াও অগ্নিধ্বজা।” অর্থাৎ সমঝোতায় যান না। আর নায়ক নিজে অনেকটাই বিভ্রান্ত আজকের এক বামপন্থী দলের মতো। ত্রিশংকু তাঁর অবস্থা। লাল পতাকার ‘আহ্বান শোনো আহ্বান’ গান ব্যকগ্রাউন্ডে রেখে পরিচালক স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দেন আজকের পরিস্থিতি।

[আরও পড়ুন: চুল নিয়ে চুলোচুলির মন ভাল করা গল্প ‘টেকো’ ]

পরিচালককে বাড়তি সাধুবাদ কে সি পালের ঘটনা ও জীবনকে কেন্দ্রে রেখে তিনি তখনকার অস্থির রাজনীতির চালচিত্রটি তায় ‘বাস্তব’ করেই ফুটিয়ে তুলেছেন। ছবির সংলাপও তাই একটি প্লাস পয়েন্ট। রাজনৈতিক তর্কের জায়গাগুলোয় (সুগত সিনহা ও অরিজিৎ) তাঁদের লেখা সংলাপ বেশ পোক্ত। এমন বাস্তবধর্মী এবং রাজনৈতিক ছবিতে ব্যক্তিজীবনে সঞ্জীবের দাম্পত্য সংকটটি না থাকলেও চলতো। বুঝতে পারছি, তাঁর জীবনের ব্যর্থতা ও ট্র্যাজেডিকে ধরতেই ডিভোর্স ও আরেক প্রেমিকের অবতরণ! কিন্তু সেটা কি জরুরি ছিল?

প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবহ, শীর্ষ রায়ের চিত্রগহণ এবং সৌরভ ষড়ঙ্গীর সম্পাদনা অবশ্যই পরিচালকের প্রথম কাজকে হাত খুলে সাহায্য করেছে। যেমন করেছেন প্রধান তিন চরিত্রের তিন অভিনেতা। অঞ্জন তাঁর নিজস্ব স্টাইলেই পরিচালকের ব্যর্থতাকে ধরেছেন। নায়ক চিরঞ্জিৎ যেন দাঁড়িয়ে থাকেন সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবির নায়ক অরিন্দমের বিপরীতে। ওখানে অরিন্দম তারকা জৌলুসে হারিয়ে গিয়েছিলেন। শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দিতে পারেননি। এই ছবিতে কিন্তু উলটোটাই ঘটেছে। চিরঞ্জিৎ সেটা অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গেই পোর্ট্রে করেছেন। মেঘনাদ ভট্টাচার্যের টি সি পাল সত্যিই যেন রক্তমাংসের এক প্রতিবাদ। স্ত্রীর চরিত্রে ছোট্ট সুযোগে শ্রীলা মজুমদার আর কি-ই বা করতে পারতেন। তবে ছোট চরিত্র পেয়েও রেজিমেন্টেড পার্টির দুই নেতা বিমল চক্রবর্তী, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার কত দর! অরিজিতের এই ছবি দর্শকের কাছে অত্যন্ত সিরিয়াস একটা বার্তা দিল। বাংলা সিনেমায় ‘প্রতিবাদী স্বর’ এখনও আছে, ক্ষীণ হলেও আছে।

[আরও পড়ুন:স্মার্ট চিত্রনাট্য, ২৬/১১-র স্মৃতি টাটকা করল ‘হোটেল মুম্বই’]

 

The post বাংলা সিনেমায় ‘প্রতিবাদী স্বর’ এখনও আছে, প্রমাণ করল ‘সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে’ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement