সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ফের পুরুলিয়ার (Purulia) সিমনিতে চিতাবাঘের আতঙ্ক। এবার পুরুলিয়ার কোটশিলা বনাঞ্চলের ঝাড়খন্ড লাগোয়া সিমনি বিটের জঙ্গলে বনদপ্তরের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তার উপস্থিতি। ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবি অনুযায়ী, রাতের অন্ধকারে মৃত গবাদি পশু পাশে মুখ লুকিয়ে রয়েছে চিতাবাঘ। দেখে মনে হচ্ছে, লুকিয়ে নিজের শিকার দিয়ে উদরপূর্তি করছে সে। তবে এই চিতাবাঘটিই (Leopard) দু’ মাস আগে ক্যামেরায় ধরা পড়া সেই দক্ষিণরায় কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না পুরুলিয়া বনবিভাগ। বরং পুরুলিয়া বনবিভাগের অনুমান, এই চিতাবাঘটি আলাদা হতে পারে।
বনবিভাগের আগেই আশঙ্কা ছিল, সিমনি বিটের এই জঙ্গলে জোড়া চিতাবাঘ রয়েছে। এবার সে বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত হতে চলেছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। পুরুলিয়া বিভাগের ডিএফও দেবাশিস শর্মা বলেন, “আরও একবার ট্র্যাপ ক্যামেরায় যে চিতাবাঘের ছবি পাওয়া গিয়েছে তা প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে আগের পুরুষ চিতাবাঘ নয়। তবে এই বিষয়ে আমাদের আরও স্টাডি করতে হবে। আমরা হালকাভাবে দেখছি না। সিমনির জঙ্গলে জোড়া চিতাবাঘ থাকতেই পারে।”
[আরও পড়ুন: রাজ্যবাসীকে সুখবর শোনাল হাওয়া অফিস, জেনে নিন কবে রয়েছে ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা]
গত ডিসেম্বর মাসে সিমনি বিটের জঙ্গলে একটা বাঘ ও তার শাবককে জঙ্গলের ভিতরে দেখেছিলেন এক মহিলা। কিন্তু ওই বাঘ ও শাবক ওই মহিলাকে দেখতে পায়নি। তাই কোনও অঘটন ঘটেনি। তারপর থেকে ওই এলাকার বাসিন্দাদের অনুমান, চিতাবাঘ শাবক-সহ তার পরিবার নিয়ে আছে। ফলে এই বিষয়টি একেবারে নিশ্চিত হতে সিমনি বিটের জঙ্গলের আরও একাধিক জায়গায় ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বনদপ্তর। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্যামেরাও চলে এসেছে । কিন্তু জঙ্গলে যেভাবে আগুন লাগছে তাতে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ওই ক্যামেরা ক্ষতির আশঙ্কায় এখনই তা লাগাতে পারছে না বনদপ্তর।
[আরও পড়ুন: সত্যি হল আশঙ্কা, পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাসের জোগান বন্ধ করল রাশিয়া]
গত ২০ এপ্রিল সকালে সিমনি বিটের জঙ্গলে একটি গবাদি পশু শিকারের খবর আসে বনদপ্তরের কাছে। তারপরেই শিকারস্থলে তিনটি ক্যামেরা লাগানো হয়। গত ২২ এপ্রিল সেই ক্যামেরাগুলো খোলার পর দেখা যায়, ২০ এপ্রিল সন্ধে ৭ টা ২০ মিনিটে ওই শিকারস্থলে আসে পূর্ণবয়স্ক হৃষ্টপুষ্ট একটি চিতাবাঘ। আগের চিতাবাঘটি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দিয়েছিল ২২ শে ফেব্রুয়ারি রাত ৯ টা ৫১ মিনিটে। ফলে জোড়া চিতাবাঘের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হতে বনাঞ্চলে আগুন লাগার মধ্যেই আরও তিনটি ট্র্যাপ ক্যামেরা ওই শিকারস্থলের আশে-পাশে বসাচ্ছে বনদপ্তর। ইতিমধ্যেই ২০ এপ্রিলের ওই ছবি অরণ্য ভবনে পাঠিয়ে দিয়েছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। যেভাবে সিমনি বিটের জঙ্গলে গবাদিপশুর দেহ মিলছে, তাতে ওই পাহাড়তলিকে গ্রাস করেছে নতুন আতঙ্ক। বছর দুয়েক ধরেই এই জঙ্গলে একের পর এক গবাদি পশু নিখোঁজ হচ্ছে। সেইসঙ্গে ছাগল, গাভীর দেহাবশেষ মিলছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২০ জুন এই বনাঞ্চলের টাটুয়াড়া গ্রামের লোকালয়ে চলে এসেছিল একটি চিতাবাঘ । যদিও সেই চিতাবাঘকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে মারে এলাকার মানুষজন। এই ঘটনার পরেই বন্যপ্রাণ বাঁচাতে ওই এলাকায় বনদপ্তর সচেতনতার প্রচার চালিয়েছে। সেই প্রচারে সাড়া দিচ্ছেন বিস্তীর্ণ কোটশিলা বনাঞ্চলের মানুষজন।