দুলাল দে: আর্থিক সমস্যায় ভালো জাতীয় কোচ ঠিক করতে পারছে না ফেডারেশন। সেরকম হলে কিছুদিনের জন্য ভারতীয় কোচের দিকেও ঝুঁকে পড়তে পারে। যেরকম জুনিয়র স্তরে রঞ্জন চৌধুরীকে করা হয়েছে। তবে চেষ্টা হচ্ছে ২০ জুলাই ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে জাতীয় কোচের বিষয়টি তুলতে। অন্তত জানানোর চেষ্টা চলছে, কাদের কাদের নাম জাতীয় কোচের জন্য আলোচনার একেবারে শেষের দিকে এসেছে।
জাতীয় কোচের জন্য পাঁচজনের যে শর্টলিস্ট হয়েছে, তাতে হাবাসের (Antonio Lopez Habas) সঙ্গে নাম রয়েছে মানালো ডিয়াজেরও। সেরকম নাম রয়েছে কলকাতার সঞ্জয় সেনেরও। কিন্তু ফেডারেশন ঠিক করতে পারছে না, জাতীয় কোচের পদে ভারতীয় না বিদেশি কোচ রাখা উচিত। ফেডারেশনের (AIFF) কার্যকরী কমিটির অনেক সদস্যের মত, জাতীয় কোচের পদে অবশ্যই ভালো মানের বিদেশি কোচ রাখা উচিত। সেক্ষেত্রে তাদের মত হল, আইএসএলের (ISL) ক্লাবগুলিই তাদের চিফ কোচ হিসেবে কোনও ভারতীয় কোচকে রাখতে রাজি নয়, সেখানে জাতীয় কোচের চেয়ারে কোনও ভারতীয় কোচ রাখলে ভবিষ্যতের পথে এগোনো মুশকিল হবে। ফেডারেশনের শর্টলিস্টে ওড়িশা এবং নর্থ ইস্টের প্রাক্তন কোচের নামও রয়েছে।
[আরও পড়ুন: অলিম্পিকে জঙ্গি হামলা ঠেকাতে বিশেষ অস্ত্র, প্যারিসে পাড়ি ভারতের সারমেয় বাহিনীর]
যে বিদেশি কোচরা ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, তাঁদের মধ্যে হাবাসের বেতনই সবচেয়ে কম। ফেডারেশন চাইছে ভাল মানের বিদেশি কোচ। কিন্তু সেক্ষেত্রে যে বেতন দিতে হবে, তা বহন করার মতো জায়গায় এই মুহূর্তে নেই ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। কিছুদিন আগে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন মাসের বেতন দিতে চেয়ে প্রাক্তন কোচ ইগর স্টিমাচকে (Igor Stimac) যে মেল ফেডারেশন পাঠিয়েছিল, তাতে স্টিমাচ রাজি হচ্ছেন না বলেই খবর। যতদূর শোনা যাচ্ছে, চুক্তিমতো পুরো বেতন চেয়েই ফিফার কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইগর স্টিমাচ। তাঁকে পুরো বেতন দিতে হলে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার মতো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে ফেডারেশন। যা সামলানোর ক্ষমতা এই মুহূর্তে এআইএফএফের নেই। ইগর স্টিমাচও পুরো বিষয়টি শেষ না দেখে ছাড়তে চাইছেন না। কারণ, ফেডারেশন তাঁকে এই প্রস্তাবগুলি গোল্ডেন হ্যান্ডশেক হিসাবেই করতে পারত। তা না করে, সরাসরি বরখাস্ত করে দেওয়ায় পুরো ব্যাপারটিকে অপমান হিসাবেই দেখছেন ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রোয়েশিয়ান কোচ। যদি স্টিমাচকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, তা হলে ভাল কোনও বিদেশি কোচ নেওয়ার রাস্তায় হাঁটার অবস্থায় থাকতে পারবে না ফেডারেশন। সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ভারতীয় কোনও কোচের হাতেই তুলে দেওয়া হতে পারে জাতীয় দলের দায়িত্ব।
কারণ ভারতীয় কোচ নিলে বিশাল বেতন দিতে হবে না। আবার ভারতীয় ফুটবল সমর্থক ও প্রাক্তন ফুটবলারদের এরকমও দেখানো যাবে যে ফেডারেশন ভারতীয় কোচদের উৎসাহ দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে নানা সমালোচনায় বিবর্ণ ফেডারেশন কর্তারা সাময়িকভাবে সমালোচনার হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন। তবে পুরোটাই আলোচনা স্তরে। কারণ, ফেডারেশনের টেকনিক্যাল কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই বলছেন জাতীয় কোচ কাকে করা হবে তা নিয়ে বেশিরভাগ সদস্যই অন্ধকারে। পুরো টেকনিক্যাল কমিটিকে না জানিয়ে কোচের নাম ঠিক করে ফেললে সেক্ষেত্রে কেউ কেউ বিদ্রোহ করতে পারে। আশা করা যাচ্ছে কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে সবকিছু খুলে বলা হবে। তার আগের দিন ১৯ জুলাই দিল্লিতে ফেডারেশনের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সেই উপলক্ষ্যে ফেডারেশনের সব কর্তাই দিল্লিতে উপস্থিত থাকবেন। আর একদিন পরেই কার্যকরী কমিটির বৈঠক।
[আরও পড়ুন: অলিম্পিকে ১১৭ সদস্যের ভারতীয় দল, পদকের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলার একাধিক ক্রীড়াবিদও]
ভারতীয় কোচ নিতে হলে সঞ্জয় সেনের (Sanjay Sen) দিকেই পাল্লা ভারী রয়েছে। আর ফেডারেশন ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের দেখাতে চাইবে, ভারতীয় কোচের উপরেই ভরসা রাখতে চাইছে তারা। আসলে ভারতীয় কোচের দিকে ঝুঁকে পড়ার একটাই কারণ, ফেডারেশনের আর্থিক অভাব, সেটা কিছুতেই প্রকাশ্যে আনতে দিতে চাইছেন না তাঁরা। সব মিলিয়ে জাতীয় কোচ নির্বাচন করতে গিয়ে বেশ সমস্যায় রয়েছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন। তবে আশা করা যাচ্ছে ২০ জুলাই দিল্লিতে কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে জাতীয় কোচ নিয়ে একটা রূপরেখা তৈরি হয়ে যাবে।