সুপর্ণা মজুমদার: লজ্জা নারীর ভূষণ, ভদ্রবাড়ির মেয়েরা রাত নটার পর বাড়ি থেকে বেরোয় না। এমন কথা শুনতে হয়েছে, শুনতে হয়। কেন? এই প্রশ্ন তুললেন অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Adhya)। অভিনেত্রী জানতে চান, কেন কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষের জন্য মেয়েরা সুস্থভাবে বাঁচতে পারবে না? কেন বুক ঢাকতে হবে ব্যাগে?
ছবি: সংগৃহীত
আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল গোটা দেশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলন হচ্ছে আরও তীব্রতর। বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে নারী নিরাপত্তা নিয়ে। রাতে মেয়েদের কাজ করা নিয়েও জোর চর্চা। সেই প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়েই অভিনেত্রী বলেন, "আমাদের ছোটবেলায় ছিল, মেয়েরা রাত নটার পর বাড়ির বাইরে থাকবে না। কাকারা বলত, ভদ্রবাড়ির মেয়েরা নাকি রাত নটার পর বাইরে থাকে না। সেটা তাঁদের চিন্তাধারা ছিল। পুজোর সময়ও বাড়িতে রাত নটার মধ্যে ফিরতে হবে এটা বাড়ির নিয়ম ছিল, মানসিকতা ছিল। সেই মানসিকতা কেন ছিল? নিশ্চয়ই সুরক্ষার অভাব থেকে ছিল! হয়তো সেরকম সুরক্ষা ছিল না, সেরকম ঘটনা ঘটত, আর সেই জন্যই হয়তো বলত রাত্রি নটার পর তুমি যদি বাইরে থাকো তোমার সম্মান বজায় থাকবে না। এটা একটা সময় ছিল। কিন্তু এখন তো ধারা পালটেছে। এখন তো রাতেই কাজ। যেমন আমাদের পেশায়।"
অভিনেত্রীর কথায়, "রাতের শুটিং তো দিনে করা যাবে না, সেটা তো রাতেই করতে হবে। মেডিক্যাল থেকে আরম্ভ করে কর্পোরেট, রাতে ডিউটি তো অনেকের মাস্ট। আমার নাচের স্কুলের মেয়েদেরও অনেকের রাতের শিফট থাকে। সুতরাং, আমাকে যদি রাতে কাজ করতে না দেওয়া হয় তার মানে আমার নিরাপত্তার অভাব আছে। যেখানে এটা বলা হচ্ছে সেই রাজ্যে, সেই শহরে নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। সেটাকে আমাদের লড়াই করেই ঠিক করতে হবে।"
[আরও পড়ুন: বাস্তব অবলম্বনে তৈরি জন-শর্বরীর ‘বেদা’র সম্ভাবনা প্রচুর ছিল, কিন্তু… ]
যাবতীয় ভদ্রতার দায় কি মেয়েদের উপরই চাপিয়ে দেওয়া হয়? প্রশ্ন শুনেই অভিনেত্রী বলে উঠলেন, "হ্যাঁ হ্যাঁ, চিরকাল তাই-ই। যে ধর্ষিত হয়েছে তারই লজ্জা, যে ধর্ষণ করেছে তার কোনও লজ্জা নেই। এখনও অনেক লোক বলে, সে ওখানে গিয়েছিল কেন? এরকম জামা পরেছিল কেন? এই সব কথা হয়। এগুলো মানুষের বিকৃত মানসিকতা। যাঁরা এই ধরনের মানসিকতা পোষণ করে যে ধর্ষিতা হয়েছে সে খারাপ, তাঁরাই নিজেরা ধর্ষক। এটা ঘূণ ধরা একটা মানসিকতা। আজকে এই যে এত ঘটনা ঘটছে, এটা কেন হচ্ছে? এটা তো মানুষের বিকৃত রুচির পরিচয়। আজকে যে দেশে এত ধর্ষণ, এত ঘটনা...এগুলো বিকৃত মানসিকতার পরিচয়।"
ছবি: সংগৃহীত
অভিনেত্রীর প্রশ্ন, "আর এই যে প্রশাসন নিয়ে এত কথা, প্রশাসনে যে মেয়েরা কাজ করে তাঁরা সুরক্ষিত? এটা বিকৃত মেন্টালিটির মানুষের পরিচয় এবং তাদের কিছু করা যাচ্ছে না সেটা ব্যর্থতা। এটাকে আন্দোলন করে বন্ধ করতে হবে। নিয়ম আনতেই হবে। কিছু করার নেই। আমার পরের প্রজন্ম কেন সুন্দরভাবে বাঁচবে না? সমাজের কিছু বিকৃত মানসিকতার জন্য আমি আমার বাকি জীবনটা কেন সুন্দরভাবে বাঁচব না? তাঁদেরও কেন বুকে ব্যাগ নিয়ে যেতে হবে? তাঁদেরও কেন কেউ গায়ে হাত দিলে বাড়ির লোক বলবে ওরকম হয় ছেড়ে দাও, ভুলে যাও... তারাই বা কেন বাসে-ট্রামে উঠলে হেনস্তার শিকার হবে? আমরা কোনও মেয়ে বলতে পারব না আমাকে মলেস্ট করা হয়নি। যদি কেউ বলে তার মানে সে জীবনে কোনওদিন বাড়ি থেকেই বেরোয়নি বা তার বাড়িতে আত্মীয়স্বজন কেউ নেই। এই ঘটনা তো ঘটেই থাকে আমাদের সঙ্গে। আমি কেন আমার সমাজে সুস্থভাবে বাঁচব না? আমার গায়ে হাত তুললে আমি কেন তার হাতটা ভেঙে দিতে পারব না? আমাকে কেন বলা হবে ঠিক আছে ভুলে যাও বা সাবধানে থাকো। এই কথাটা আমরা কেন আর শুনব? কিছু বিকৃতরুচির মানুষের জন্য কেন আমাদের এটা শুনতে হবে যে তোমরা সাবধানে থাকো। তারা সাবধানে থাকুক। তারা নিজেদের পালটাক, তাদের কাউন্সিলিং হোক, তাদের ডাক্তার দেখানো হোক, তারা মেন্টাল হাসপাতালে যাক। আমরা কেন করব?"