চঞ্চল প্রধান, হলদিয়া: একেবারে ফিল্মি কায়দায় হলদিয়ার কৃষি সমবায় ব্যাঙ্কে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা ডাকাতি। বুধবার দুপুরে হলদিয়া ব্লকের চকলালপুর-দেউলপোতা-গরানখালি কৃষি সমবায় ব্যাঙ্কের ঘটনা। ডাকাতির ঘটনার যাবতীয় সূত্র লুকোতে ব্যাঙ্কের সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্কটিও নিয়ে চম্পট দিয়েছে ডাকাতদল। দিনে দুপুরে এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
এলাকার দীর্ঘ ৪৬ বছরের পুরনো সমবায় সমিতি। কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট (সিএসপি) নামে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা বছর তিনেক আগেই চালু হয়েছে। সমবায়ের ১ হাজার ৩২ জন সদস্যের পাশাপাশি এলাকার মানুষ এই সমবায় ব্যাঙ্কে টাকা লেনদেন করে থাকেন। সব মিলিয়ে এই ব্যাঙ্কে সাড়ে তিন হাজার গ্রাহক রয়েছেন। কৃষি ঋণ, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্য ঋণ দেওয়ার কাজ এখানে বেশি হয়। বছরে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। সারা সময় গ্রাহকদের ভিড় লেগেই থাকে।
[আরও পড়ুন: টেমসের মতো গঙ্গার পাড় সাজাবে রাজ্য, জলে নামবে দূষণহীন আধুনিক জলযান]
কিন্তু বুধবারের ছবিটা ছিল অন্যরকম। দুপুরবেলা গ্রাহক তেমন ছিল না বললেই চলে। ঘড়ির কাঁটায় ১২টা বেজে ১০ মিনিট তখন বন্দুকধারী চার ডাকাত মাথায় হেলমেট পরা অবস্থায় ব্যাঙ্কে ঢোকে। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার-সহ বাকি তিনজন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। গ্রাহক বলতে তখন একজন মহিলা তাঁর শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। সবাইকে হাত উপর দিকে তুলে চুপচাপ দাঁড়াতে বলে ডাকাতরা। ভীতসন্ত্রস্ত সকলেই সেইমতো হাত উপরে তুলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়েন। তারপর তাদেরকে ম্যানেজারের ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আলমারি, ভল্ট সব কিছু ভেঙে টাকা ডাকাতরা নিজেদের ব্যাগে ভরে নেয়। তারপর বন্দুক উঁচিয়ে সিসি ক্যামেরার হার্ডডিক্স চায়। হার্ডডিস্কের জায়গা দেখিয়ে দেওয়ার পর সেটিও নেয়। ব্যাঙ্কে থাকা প্রত্যেককে একটি শৌচাগারের মধ্যে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে ডাকাতরা বেরিয়ে যায়।
ব্যাংকের সামনে দুটি বাইক নিয়ে অপেক্ষায় ছিল অপর দুই ডাকাত। দুটি বাইকে চেপে ছজন ডাকাত ব্রজলালচকের দিকে চম্পট দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ব্যাংকের ম্যানেজার অপূর্ব দাস জানান, “এমন হাড়হিম করা ঘটনা ঘটবে ভাবতেই পারি না। পরিকল্পিতভাবেই হেলমেট পরে সশস্ত্র অবস্থায় ডাকাত দলটি ব্যাঙ্কে ঢুকেছিল। ওরা বাংলা ভাষায় কথা বলছিল। আমাদের টুঁ শব্দ করার সুযোগটুকু দেয়নি। প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা ডাকাতি হয়ে গিয়েছে।” ঘটনার প্রসঙ্গে স্থানীয় সুতাহাটা থানার ওসি অভিজিৎ পাত্র জানান, “যে রাস্তা দিয়ে ডাকাত দলকে গিয়েছে, সেই রাস্তায় থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে। তদন্ত চলছে।” এত বড় ডাকাতির ঘটনার পিছনে বড় চক্র থাকতে পারে বলে স্থানীয়দের একাংশের অনুমান। ব্যাঙ্কে কখন লোক কম থাকে বেশি থাকে এ বিষয়ে ডাকাত দলটি ওয়াকিবহাল ছিল। যার ফলে এমন দুঃসাহসিক ঘটনা ঘটাতে পেরেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।