আকাশ মিশ্র: প্রমোদতরীতে রেভ পার্টি। উপস্থিত এক তারকাপুত্র। উল্লাসের রাতে হঠাৎই এনসিবি হানা। পার্টি থামিয়ে মাঝরাতে ধরপাকড় শুরু। আলো ঝলমলে রাত থেকে হঠাৎই বলিউডের বাদশার পরিবারেই যেন নেমে এল ঘন কালো অন্ধকার। ঘণ্টায় ঘণ্টায় জেরা। শেষমেশ গ্রেপ্তার! সংবাদের জগতে বিগ ব্রেকিং। এতক্ষণে নিশ্চয়ই পরিষ্কার, কে এই তারকাপুত্র। হ্য়াঁ, গত ২ অক্টোবর থেকে সব খবরকে পিছনে ফেলে নজরে পড়েছেন শাহরুখপুত্র আরিয়ান খান (Aryan Khan)। আর তা থেকে পরিষ্কার, আরিয়ান খানের গায়ে বোধহয় খুব সহজেই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ট্যাগ লাগানো যায়। তবে শুধুই গ্রেপ্তারি নয়। আরিয়ানের বার বার জামিন খারিজ হওয়ার ঘটনাও, তিলকে তাল বানাতে একেবারে অনুঘটকের মতো কাজ করেছে। তার মানে কি আরিয়ান নির্দোষ? এ নিয়ে তর্ক যেতে পারে বহুদূর। তবে অনেকেই আরিয়ানের এই গ্রেপ্তারি এবং বারংবার জামিন খারিজ হওয়ার ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্র এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের গন্ধ পাচ্ছেন। আর এই জল্পনাকে কিন্তু একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ঘটনাপ্রবাহগুলো সাজানো যাক।
২ অক্টোবর আটক হলেন আরিয়ান খান। সঙ্গে আটক হলেন আরও দু’ জন মুনমুন ধামেচা ও আরবাজ মার্চেন্ট। আটক হওয়ার পরের দিনই এনসিবি গ্রেপ্তার করে আরিয়ান খান, মুনমুন ও আরবাজকে। প্রথমে এনসিবি হেফাজত, পরে অক্টোবর মাসের ৭ তারিখ ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজত হয় এই তিনজনের। অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখ গোটা দিন ধরে শুনানি চলার পর আরিয়ানের জামিন খারিজ হয়। আদালত জানায়, ২০ অক্টোবর ফের শুনানি। ২ তারিখ থেকে আজ ২০ অক্টোবর। প্রায় ১৮ দিন কারাগারে বলিউডের বাদশাপুত্র। মা-বাবার সঙ্গে কথা কেবল মাত্র ভিডিও কলে। এই অকস্মাৎ ধাক্কায় আরিয়ান নাকি ভেঙে পড়েছেন। জেলের খাবার মুখে তুলছেন না। এমনকী, এনসিবি অফিসারকে জেরায় আরিয়ান বলেছেন, জেলে থেকে ছাড়া পেলে একেবারে বদলে যাব! কিন্তু তাঁর মুক্তি সেই বিশ বাঁও জলেই।
[আরও পড়ুন: জামিন পেলেন না আরিয়ান খান, আপাতত জেলেই থাকতে হবে শাহরুখপুত্রকে]
বলিউডের বহু তারকারা আরিয়ানের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা পোস্টে গোটা ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। অনেকের মত, শাহরুখপুত্র (ShahRukh Khan) নোংরা রাজনীতির ফাঁদে পড়েছেন। হয়তো শাহরুখপুত্র হওয়ার খেসারতই দিচ্ছেন আরিয়ান।
কিন্তু এই জল্পনার সূত্রপাত কোথা থেকে?
এনসিবির হাতে আরিয়ান আটক হওয়ার পর একটি ভিডিও দারুণ ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে কিরণ পি গোসাভি এবং মনীশ ভানুশালি নামের দুই ব্যক্তি আরিয়ান খানকে আটক করেছেন। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এনসিবি-র তরফ থেকে জানানো হয়েছিল এই দুই ব্যক্তি নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর সঙ্গে একেবারেই যুক্ত নয়। কারা এই দু’ জন? প্রশ্ন উঠলেও উত্তর পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, তথ্য বলছে এই মামলায় এখনও পর্যন্ত আরিয়ানের বিরুদ্ধে শক্তপোক্ত কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পার্টিতে আরিয়ান উপস্থিত থাকলেও, তাঁর কাছ থেকে কিন্তু মাদক পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন আরিয়ানের আইনজীবী। এনিসিবি কর্তাদের হাতে শুধুই রয়েছে আরিয়ানের কিছু হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট! এই চ্যাটে কী রয়েছে? এনসিবি কর্তাদের দাবি নানা মানুষের সঙ্গে মাদক নিয়ে নানা সময় চ্যাট করেছেন আরিয়ান।
এখনও পর্যন্ত এই মাদক মামলায় ১৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। যার মধ্য়ে রয়েছে পার্টির আয়োজক অর্থাৎ ইভেন্ট ম্য়ানেজমেন্ট কোম্পানির কয়েকজন কর্মীও। রয়েছে মাদকপাচারের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তিও। তবুও গোটা নজরটা যেন আরিয়ানের দিকেই।
আরিয়ানের এই গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বহু রাজনৈতিক নেতাও। ঠিক যেমন, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির নেতা নবাব মালিক আরিয়ানের গ্রেপ্তারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর দাবি, বিজেপি ও মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তর (এনসিবি)-এর যোগসাজশের জেরেই শাহরুখপুত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মহারাষ্ট্র সরকার ও বলিউডের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এই চক্রান্ত করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন নেতা। এখানেই থেমে থাকেননি নবাব মালিক। অফিসার সমীর ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধেও তোপ দাগলেন মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, প্রমোদতরীতে অভিযান চালিয়ে শাহরুখপুত্র আরিয়ান খানকে (Aryan Khan) গ্রেপ্তারির সময় এনসিবি আধিকারিকরা পরিচিত বা কাছের লোকেদের সাক্ষী হিসেবে ব্যবহার করেছেন। বিশেষত সমীর ওয়াংখেড়ে তাঁর বিশেষ পরিচিতদের এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে রেখেছেন। এমনকী, সমীর ওয়াংখেড়ের নেপথ্য়ে গেরুয়া শিবিরের মদতের জল্পনাকেও উসকে দিয়েছেন তিনি।
কংগ্রেস নেতা শচীন সাওয়ান্তও আরিয়ানের গ্রেপ্তারের ঘটনায় এনসিবি’র বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেছেন, মাদক বাজেয়াপ্ত ও অভিযানে উপস্থিত দুই ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে এনসিবি কর্মকর্তাদের বক্তব্যে গরমিল রয়েছে। আর এর থেকেই স্পষ্ট আরিয়ানের গ্রেপ্তারের নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও অভিসন্ধি।
আরিয়ান দোষী নাকি নির্দোষ তা সময় বলবে। এই নিয়ে তর্ক বহুদূর চলবে। হয়তো জামিন না পেয়ে আরও কয়েকদিন জেলেই থাকতে হবে আরিয়ানকে। শাহরুখ ও গৌরী খানের দুশ্চিন্তাও বাড়বে। প্রশ্ন, এত সবের পরেও কি সত্যটা সামনে আসবে? ঠিক যেমন সুশান্ত কাণ্ডে রিয়া চক্রবর্তী!