মনিশংকর চৌধুরি, গুয়াহাটি: জীবনভর অত্যন্ত দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে নিজের ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন। তাই জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকা নিয়ে কোনও সংশয়ই ছিল না গুয়াহাটির চিকিৎসক মাফুজুর রহমান। এনআরসি’র আগে তিনি বেশ আত্মবিশ্বাসী, নির্ভার ছিলেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটে গেল একেবারে অনভিপ্রেত ঘটনা। শনিবার তালিকা প্রকাশিত হতেই দেখা গেল, নাম নেই ডাক্তার মাফুজুর রহমানের। তা সত্ত্বেও ভেঙে পড়েননি তিনি। বলছেন, হাই কোর্টে গিয়ে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করবেনই।
[আরও পড়ুন: অসমে ৭৩ বছরের বাঙালি চিকিৎসককে পিটিয়ে মারল চা শ্রমিকরা]
শনিবারই টুইটারে আবেগঘন অনুভূতি প্রকাশ করে মাফুজুর রহমান লিখেছেন, ‘এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায় আমার নাম নেই। তা সত্ত্বেও আমাদের হাসপাতালের কয়েকজন সহকর্মী মিলে এই উপলক্ষে ছোট্ট একটা খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছিল, আমি তাতে অংশ নিয়েছি।’ এরপর তিনি আরও বলেন,’আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হাই কোর্টে গেলে আমি ঠিক নিজের নাগরিকত্বের যথাযথ প্রমাণ দিতে পারব। আমি একজন
দায়িত্ববান নাগরিক। শুধু আমিই নই, গোটা রাজ্যের মানুষজন এনআরসির কাজ চলাকালীন গোড়া থেকেই খুব সহযোগিতা করেছিলাম। ধৈর্য ধরে সমস্ত নথি পেশ করেছি। আমার ঠাকুরদার এদেশের পাসপোর্ট আছে। তা সত্ত্বেও আমার নাম বাদ পড়ল।’
মাফুজুরের মতো কারগিল যোদ্ধা মহম্মদ সানাউল্লার নামও এনআরসির তালিকার বাইরে ছিটকে গিয়েছে। তবে তিনিও মাফুজুরের মতোই আত্মবিশ্বাসী। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘ভাবতেই পারছি না যে আমার নাম এভাবে বাদ পড়ে যাবে। একজন সেনা জওয়ানের কাছে এটা যে কত বড় ধাক্কা, তা বোঝাতে পারব না। আমি প্রকৃত ভারতীয় বলেই কি আমার বিদেশি তকমা জুটল? তবে আশা ছাড়ছি না, হাই কোর্টে গিয়ে ঠিক নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে পারব।’
১৯ লক্ষের তালিকায় আরও কত হতভাগ্যই যে রয়েছেন গোটা অসমজুড়ে, তাদের সকলে হয়ত প্রচারের আলোয় আসতে পারছেন না। কিন্তু নাগরিকত্ব প্রমাণের ব্যর্থতার যন্ত্রণা তো তাঁদেরও কুরে কুরে খাচ্ছে। মাথায় হাত দিয়ে কেউ ভাবতে বসেছেন, এবার কী হবে? তবে কি ডিটেনশন ক্যাম্পই ভবিতব্য? কেউ অজানা ভবিষ্যতের আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে রয়েছেন। কেউ বা তালিকায় নাম না দেখে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে একটি পদ্ধতির নানা ধাপে প্রমাণ দিতে দিতে জেরবার মানুষজন।
শেষমেশ চূড়ান্ত ফলাফলেও ডাহা ফেল ১৯ লক্ষ। এই অবস্থায় ক’জনই বা মাফুজুরের মতো দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী থাকতে পারেন?
[আরও পড়ুন: NRC-তে ‘ব্রাত্য’, আতঙ্কের প্রহর গুনছে ১৯ লক্ষ মানুষ]
এদিকে, শনিবারের পর রবিবারও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এনআরসি তালিকা নিয়ে তোপ দেগেছেন। বিস্তারিত তালিকা দেখে তিনি জানতে পেরেছেন, বাদ পড়া ১৯ লক্ষের মধ্যে রয়েছেন প্রায় ১ লক্ষ গোর্খা। সেই পরিসংখ্যান তুলে তাঁর অভিযোগ, নাগরিকপঞ্জির নামে প্রকৃত ভারতীয়দেরই বাদ দেওয়া হয়েছে।
The post হতাশা নয়, এনআরসি’তে নাম না দেখে নাগরিকত্ব প্রমাণে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চিকিৎসক appeared first on Sangbad Pratidin.