সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইসলামিক কর্পোরেশনের বৈঠক থেকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ার আহ্বান জানালেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আজ সংযুক্ত আরব আমিরশাহির রাজধানী আবুধাবিতে আয়োজিত OIC-র ৪৬তম বৈঠকের মঞ্চ থেকে নাম না করে পাকিস্তানকে সন্ত্রাস মদত দেওয়া নিয়ে কটাক্ষও করেন তিনি।
৫৭টি মুসলিম প্রধান দেশের বিদেশমন্ত্রীর সামনে OIC-র আরেক সদস্য পাকিস্তানের উদ্দেশে বলেন, “যদি আমরা মানবতাকে রক্ষা করতে চাই, তাহলে যে দেশগুলি জঙ্গিদের আশ্রয় দেয় ও অর্থ সাহায্য করে তাদের সেই কাজ বন্ধ করতে বলতে হবে। দেশের মধ্যে আশ্রয় ও প্রশ্রয় না দিয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলির ঘাঁটিগুলিকে ধ্বংস করতে হবে। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা আলাদা এই শব্দদুটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এরা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করে মানুষের বিশ্বাসকে বিপথে চালিত করে সফল হতে চায়।”
প্রথমবার OIC-র বৈঠকে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়ার জন্য এই সংগঠনের সব সদস্য দেশকে ধন্যবাদও দেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী। বলেন, ‘প্রাচীন সভ্যতা ও মহান ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করা দেশগুলির বিদেশমন্ত্রী তথা আমার সহকর্মীদের সঙ্গে এই বৈঠকে যোগ দিয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি। আজ আমি এখানে এমন একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে উপস্থিত হয়েছি যেখানে জ্ঞানের পাহাড় রয়েছে। যেখান থেকে শান্তির আলো ছড়ানো হয়। ভরসা ও সংস্কারের যে বাড়িতে নানা ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাস করে এবং যে দেশ বিশ্বের অন্যতম আর্থিক শক্তি।’ ইসলামিক কর্পোরেশনের সদস্যরা যে রাষ্ট্রসংঘের এক-চতুর্থাংশ অংশ সেকথা উল্লেখ করে তাঁর বক্তব্য, ‘আপনাদের চেষ্টার জন্যই বিশ্বের এক-চতুর্থাংশে মানবতা বিরাজ করছে। ভারতও অনেক দিন ধরে আপনাদের পাশে থেকে বিশ্বে শান্তি আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকী এখানে অনেকেই আছেন যারা আমাদের সঙ্গে ঔপনিবেশকতার সেই কালো দিনগুলি কাটিয়ে এসেছেন।’
[দেশেই রয়েছে মাসুদ আজহার, চাপের মুখে স্বীকার পাক বিদেশমন্ত্রীর]
এই প্রথম বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলিকে নিয়ে গড়ে ওঠা অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কর্পোরেশনের কাউন্সিল অফ ফরেন মিনিস্টারস বৈঠকে উপস্থিত থাকলেন ভারত সরকারের কোনও প্রতিনিধি। তাও আবার সম্মানীয় অতিথি হিসেবে। যদিও OIC-র এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির রাজধানী আবুধাবিতে আয়োজিত কাউন্সিল অফ ফরেন মিনিস্টারস-এর ৪৬তম বৈঠক বয়কট করেছে পাকিস্তান। সুষমার উপস্থিতির জেরে গরহাজির থেকেছেন বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ খুরেশি। পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ফলে যখন দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে অবনতি হয়েছে তখন সুষমা স্বরাজকে কেন এই বৈঠকে ডাকা হল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। মুসলিম বিশ্বের স্বার্থরক্ষার জন্য ৫৭টি দেশকে নিয়ে গড়ে ওঠা অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কর্পোরেশন বিশ্বে বিভিন্ন দেশে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার কথা প্রচার করে। কিন্তু, তাদের থেকে যে পাকিস্তানের লক্ষ্য যে আলাদা তা ফের এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হল।
[ধরা পড়েও মাথা ঠান্ডা রাখেন অভিনন্দন, দেশের সুরক্ষায় করেছিলেন এই কাজটি]
গতকাল ইসলামাবাদে পাকিস্তান সংসদের যৌথ অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বিদেশমন্ত্রী কুরেশি বলেন, “সুষমা স্বরাজকে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আর্দশগত কারণে আমি কাউন্সিল অফ ফরেন মিনিস্টারস-এর বৈঠকে যোগ দিচ্ছি না। পাকিস্তানের উত্তপ্ত পরিস্থিতির কথা জানিয়ে আমি আগেই OIC-র কাছে বৈঠক পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু, ওরা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছিল। এরপর গত ২৬ তারিখ আমি ওদের ফের চিঠি লিখে সুষমা স্বরাজকে আমন্ত্রণ জানানো হলে পাকিস্তান বৈঠকে যোগ দেবে কি না তা পুনর্বিবেচনা করছে বলেও জানাই। ২৮ তারিখ বিরোধী দলগুলির তরফে আরও একটি পয়েন্ট যোগ করা হয়। তারা, OIC-র ওই বৈঠকে আমাকে যোগ না দেওয়ার পরামর্শ দেয়।”
[এয়ারস্ট্রাইকের প্রমাণ চাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ দাগলেন কৈলাস]
ওই বৈঠকে ভারতকে যে পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তারও বিরোধিতা করেন তিনি। জানান, ভারত ওই সংগঠনের একজন সদস্য নয়। পর্যবেক্ষক হিসেবেও এই গ্রুপে তাদের কোনও জায়গা নেই। তাদের পর্যবেক্ষক করার বিষয়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তীব্র বিরোধিতা জানানো হয়েছে। যদিও পাকিস্তানের কোন চেষ্টাই শেষপর্যন্ত কাজে আসেনি। তা আজ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে OIC-র বৈঠকে। অন্য দেশগুলির পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বের দেশগুলিও যে আজ আর পাকিস্তানের পাশে নেই তার প্রতীক হয়ে উঠেছে বৈঠকে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর জন্য নির্দিষ্ট থাকা চেয়ারটি। সুষমা স্বরাজের বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে সবার চোখে যখন প্রশংসার ঝলক তখন খুবই ম্যাড়ম্যাড়ে লাগছিল মালিকবিহীন ওই চেয়ারটি!