সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আদিবাসী কুড়মি সমাজের অনির্দিষ্টকালীন রেল ও সড়ক অবরোধের জেরে বিপাকে নিত্যযাত্রীরা। একদিকে তাঁদের আন্দোলনের জেরে বাতিল হয়েছে হাওড়া ও আদ্রা ডিভিশনের একাধিক ট্রেন। সংক্ষিপ্ত হয়েছে বহু ট্রেনের যাত্রাপথ। এমনকী, জাতীয় সড়কও অবরোধ থাকায় বুধবার সকাল থেকে হয়রানির শিকার পুরুলিয়া, খড়গপুর-সহ মেদিনীপুরের বাসিন্দারা।
এদিকে তীর-ধনুক, ধামসা-মাদল নিয়ে মঙ্গলবার রাতেই পুরুলিয়ার কুস্তাউর স্টেশনে হাজির কুড়মি জনজাতির মানুষজন। এদিন ভোর পাঁচটা থেকে আন্দোলন শুরু করেছে কুড়মি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষজন। এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রেলটেকা ও ডহর ছেঁকা’। রেল সূত্রে খবর, কুড়মি সমাজের বিক্ষোভ কর্মসূচি থাকায় ৪৯টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। যে এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি বাতিল হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য টাটা-হাওড়া স্টিল এক্সপ্রেস, হাওড়া-বরবিল জনশতাব্দী, হাওড়া-রাঁচি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস, হাতিয়া-খড়গপুপ এক্সপ্রেস, হাওড়া-ঘাটশিলা মেমু এক্সপ্রেস। দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়েতে একাধিক এক্সপ্রেস, মেমু স্পেশ্যাল বাতিল ছাড়াও বিকল্প পথে যাত্রা করছে ১১টি ট্রেন। সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে ১০টি ট্রেনের যাত্রাপথ।
[আরও পড়ুন: প্রেমিকার বরকে খুন করতেই ‘বিয়ের উপহার’ মিউজিক সিস্টেমে রাখেন বোমা! গ্রেপ্তার প্রেমিক]
আন্দোলন প্রসঙ্গে আদিবাসী কুড়মি সমাজ জানিয়েছে, এটা তাঁদের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মের জন্য লড়াই। এই লড়াইকে নৈতিক সমর্থন করুন। এবার আর আলোচনা, প্রতিশ্রুতিতে কাজ হবে না। তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলেও ঘোষণা করেছেন তাঁরা। কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতোর জানান, “আমাদের একটাই দাবি আদিবাসী তালিকাভুক্ত করার জন্য সিআরআই রিপোর্টের উপর কমেন্ট- জাসটিফিকেশন কেন পাঠানো হচ্ছে না? রাজ্য সরকার সেটা পাঠিয়ে আমাদের হাতে প্রতিলিপি দিয়ে দিক। আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেব।” পুরুলিয়া জেলা পরিষদেরসভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উৎসব ও সাধারণ মানুষজনের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে আমরা এই কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলতেই পারে। কিন্তু এভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত করে আন্দোলন আমাদের দল মেনে নেবে না। জঙ্গলমহলের সাধারণ মানুষজনও মেনে নিচ্ছেন না।”
[আরও পড়ুন: ‘আটত্রিশেও ম্যাজিক, ব্যালন ডি’অর দেওয়া হোক’, রোনাল্ডো ফের গোল করতেই দাবি ভক্তদের]
নববর্ষ ও ঈদের মুখে তাদের এই রেল ও সড়ক অবরোধের অনির্দিষ্টকালীন কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষজন ভীষণই ক্ষুব্ধ। উৎসবের মুখে এই কর্মসূচি নিয়ে জঙ্গলমহলের আম জনতা সরব। প্রসঙ্গত, গত বছরও এই দাবিপূরণের ক্ষেত্রে প্রায় একই বিষয়ে দুর্গাপুজোর মুখে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে রেল ও সড়ক অবরোধ শুরু করেছিল আদিবাসী কুড়মি সমাজ।