সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাহসা আমিনির খুনের পর থেকেই আগুন জ্বলছে ইরানে। ‘নীতি পুলিশে’র বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন মুক্তকেশী তরুণীরা। হিজাব পুড়িয়ে, চুল কেটে ইসলামের নামে মহিলাদের শিকলবন্দি করার প্রতিবাদ করছেন তাঁরা। কিন্তু থেমে নেই শাসকও। বিক্ষোভ দমনে এখনও পর্যন্ত সরকারি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৯২ জন বিক্ষোভকারী।
রবিবার মানবাধিকার সংস্থা ‘ইরান হিউম্যান রাইটস’ (আইএইচআর) জানিয়েছে, হিজাব বিরোধী বিক্ষোভ দমন করতে উঠেপড়ে লেগেছে প্রশাসন। সরকারি বাহিনীর হাতে এখনও পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯২ জন মানুষ। সূত্রের খবর, এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। আইএইচআর সূত্রে খবর, গত শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ৪১ জন। ইরানের দক্ষিণ-পূর্বে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তের কাছে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে বিক্ষোভকারীদের। কারণ, ইরানে সংখ্যালঘু সুন্নি বালোচ সম্প্রদায়ের এক তরুণীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে এক পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে।
[আরও পড়ুন: ‘ভারতের মতো উপনিবেশ গড়তে চেয়েছিল রাশিয়াতেও’, পশ্চিমি দুনিয়াকে তোপ পুতিনের]
উল্লেখ্য, ১৬ সেপ্টেম্বর ইরানের নীতি পুলিশীর মারে মৃত্যু হয় তরুণী মাহসা আমিনির। তারপর থেকেই দেশজুড়ে চলছে প্রতিবাদী মিছিল। স্বৈরশাসকের বিরোধিতায় ইটালির বুকে তৈরি হওয়া ‘বেলা চাও’ গানটি গেয়ে ইরানের (Iran) রাস্তায় প্রতিবাদ জানাচ্ছেন আরব দুনিয়ার মেয়েরা। হিজাব বিরোধী (Anti-Hijab) সেই আন্দোলনে শামিল পুরুষদের একাংশও। তাঁদের কণ্ঠেও ‘বেলা চাও’। এহেন প্রতিবাদের ভিডিও নিয়ে এখন নেটদুনিয়ায় জোর চর্চা।
এদিকে, বেকায়দায় পড়লেও কিন্তু অবস্থান বদলে নারাজ ইরানের সরকার। তেহরানের দাবি, এই বিক্ষোভে আসলে ষড়যন্ত্র এতে হাত রয়েছে আমেরিকার। একইসঙ্গে সরকারের আরও দাবি, এই আন্দোলনকে মদত দিচ্ছে ‘কোমলা’ বলে ইরানের একটি বামপন্থী সংগঠন এবং বেশ কয়েকটি জঙ্গি গোষ্ঠী। ইতিমধ্যেই ইরানের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের প্রদেশ থেকে একাধিক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর।
উল্লেখ্য, মহিলাদের জন্য কঠোর পোশাক বিধি রয়েছে ইরানে। ওই আইনে বয়স সাত বছরের বেশি হলে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। নির্দিষ্ট নিয়মে পরতে হয় হিজাব। ‘নীতি পুলিশের’ দল হিজাব বিধি সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে কিনা তা তদারকি করে থাকে। মনে করা হচ্ছে, বছর বাইশের মাহসা আমিনিকে (Mahsa Amini) নীতি পুলিশের অভিযোগেই গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ, মাহসাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ভ্যানে তোলার সময় বেধড়ক মারধর করা হয়। তাতেই অসুস্থ হন তিনি। যদিও পুলিশের দাবি তরুণীকে মারধর করা হয়নি। তবে গ্রেপ্তারের পরেই অসুস্থ হন তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর কোমায় চলে যান। হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর।