সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তুঙ্গে প্রস্তুতি। জোর কদমে প্রচার করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এর মাঝেই বুধবার নির্বাচনী ইস্তেহার প্রকাশ করল আওয়ামি লিগ। ইস্তেহারে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কর্ম সংস্থান-সহ ১১টি বিষয়কে। এদিনের অনুষ্ঠানে স্মার্ট বাংলাদেশ থিমে ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্ম সংস্থান’ স্লোগানও দেন নেতারা।
বুধবার সকালে রাজধানী ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে ইস্তেহার ঘোষণা করা হয়। আওয়ামি লিগ সভাপতি তথা দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইস্তেহার ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ইস্তেহার কমিটির প্রধান ও দলের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ আবদুর রাজ্জাক সম্ভাষণী ভাষণ দেন। এর পর বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এবারের নির্বাচন জিতে আওয়ামি লিগ ফের ক্ষমতায় এলে একাধিক বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে জানানো হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো, ব্যাঙ্ক-সহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো, মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িকতা-সহ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ এবং সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো নিয়ে ১১টি বিষয় নিয়ে এই ইস্তেহার ঘোষণা করা হয়েছে ।
[আরও পড়ুন: গ্রেপ্তার কুখ্যাত ‘বোমা মৌলানা’, লন্ডনে বসেই বাংলাদেশে বিস্ফোরণের সুর বাঁধছেন তারেক?]
এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) তাদের বিশ্লেষণে জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগের চেয়ে শাসকদল আওয়ামি লিগের কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। লিগের ৮৭ শতাংশ প্রার্থী কোটিপতি। স্বতন্ত্রদের ক্ষেত্রে এই হার প্রায় ৪৭ শতাংশ। এর পর জাতীয় পার্টির অবস্থান। তাদের প্রার্থীদের প্রায় ২২ শতাংশ কোটিপতি। নির্বাচন উপলক্ষে রিটার্নিং আধিকারীকদের কাছে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানিয়েছে টিআইবি। রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গত মঙ্গলবার ‘নির্বাচনী হলফনামার তথ্যচিত্র: জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে?’শিরোনামে এই বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। টিআইবি এবারের ভোটে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া ১ হাজার ৯২০ জন প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণ করেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ২৭৪ জন প্রার্থী ছিলেন কোটিপতি (১৭ শতাংশ)।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি জানিয়েছে, প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী সরকারের মন্ত্রিসভার অন্তত একজন সদস্যের নিজ নামে ব্রিটেনে একাধিক কোম্পানি রয়েছে, যা হলফনামায় দেখানো হয়নি। মন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রীর মালিকানাধীন ছয়টি কোম্পানি এখনও ব্রিটেনে আবাসন ব্যবসা পরিচালনা করছে। ছয়টি কোম্পানির বর্তমান সম্পদমূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যবসা ও রাজনীতি এখন একাকার হয়ে গেছে। রাজনীতিতে যাঁরা আসেন, তাঁদের অনেকে ব্যবসার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেন। আর ব্যবসায়ীদের অনেকে রাজনীতিতে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে রাজনীতির সুযোগ নেন।